আত্মার ওজন
এখন মধ্যদুপুর।
মুহিতকে দেখা যাচ্ছে। তবে মুহিত আজ হাটছেনা, দৌড়াচ্ছে। আর তার পিছে দৌড়াচ্ছে একপাল কুকুর। কুকুরগুলো কেনো হঠাৎ এমনটা করছে তা বুঝতে পারছেনা।
মুহিত কি মহাপুরুষ হয়ে গিয়েছে?
তার IQ লেভেল দেখলে কি, মেনসা'র উচ্চপদস্থ মেম্বার্সরাও আতকে উঠবে?
... ... ...
(ঘটনার আগের ঘটনা)
পারুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারছিনা, আমার কি করণীয়।
আগামী সপ্তাহে বিয়ে, এংগেজমেন্ট সেরে নিয়েছে আরোও দেড়মাস আগে। কিন্তু সমস্ত খবর আমি শুনছি কেবল, মেঘের মুখে!
- মুহিতদা, তুমি পারুদি কে নিয়ে পালিয়ে যাও। সমস্ত ব্যাকআপ আমি দিচ্ছি। একদম চিন্তা করোনা তুমি।
- পালিয়ে কি করবো? দরকার নেই, যেমন চলছে চলুক সব।
বলেই বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। মাথাটা কেমন যেনো ফাকা ফাকা লাগছে।
কড়া রোদ চারপাশে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ইস, পকেটে মিনি সাইজের ফায়ার-এক্সটিংগুসার রাখা উচিত ছিলো। আরে ধ্যাত, কিসব আবোল-তাবোল বকছি আমি? আমার তো পকেটই নেই!
- এই মুহিত!
- কে?
- চিনতে পাচ্ছিস না হতভাগা! আমি তোর বাবা।
- ও বাবা! বল
- তোকে এত অস্থির দেখাচ্ছে কেনো?
- কই নাতো!
- মিথ্যা। অস্থিরতা তো তোকে শোভা পায়না! এখুনি ঝেড়ে ফেল বলছি!
- বাবা, নাক ঝাড়ার মত ঘোৎ করে অস্থিরতা ঝেড়ে ফেলার টেকনিকটা কি জানা আছে তোমার?
- বেয়াদবি করবিনা একদম!!
- আচ্ছা
- তো, এখন বর্তমান করছিস কি, বলতো শুনি?
- আত্মার ওজন বের করছি
- বলিস কিরে! আত্মার আবার ওজন হয় নাকিরে!
- কেনো হবেনা? আলবাৎ হবে!
- হবে বলছিস?
- হু
- বড্ড জটিল বিষয় তো খোকা! ভাবতে হবে।
- আচ্ছা তুমি ভাবতে থাকো, আমি গেলাম
- হু
অসহ্য! আমার মাথা কাজ করছেনা এমনিতেই, তার উপর বাবা লেকচার দিয়েই যাচ্ছে!
তবে, হুট করে যে আত্মার ওজন নিয়ে বললাম, এটা কি পরাবাস্তব কিছু বলেছি কি? চাইলেই আত্মা ওজন করা যায়। তবে লাগবে সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা। তবে আপাতত মুদি দোকানির বাটখারাতেই কাজ সারব।
খুজে খুজে এক কুকুরছানা পেলাম। নর্দমার ধারে পড়ে ছিলো। তুলে এনে আচ্ছামত গোসল করিয়েছি, খাইয়েছি। মেসের ম্যানেজার সাহেবের তো চোখ ছানাবড়া! যদিও মুখে কিছু প্রকাশ করছেন না। আমি গুরুত্ব দিচ্ছিনা। কুকুরটাকে ঘুম পাড়াচ্ছি।
লজিকিটা সিম্পল:
আমরা জানি, ঘুমালে আত্মা দেহ ছেড়ে সাময়িকভাবে মুক্তি নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। মানে এই দাড়াচ্ছে, ঘুমাবস্থায় আত্মা দেহের বাইরে থাকে। তাহলে, ঘুমাবার আগে সূক্ষ্ম ভাবে ১বার ওজন মেপে নিবো। তারপর ঘুমাবস্থায় আরেকবার।
১টা ওজন থেকে অন্য ওজনের পার্থক্যটাই, আত্মার ওজন।
সহজ ও সিম্পল হিসাব। কুকুরছানাটা ঘুমিয়ে পড়েছে...
(৬ মাস পর...)
অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
আত্মার ওজন হিসাবে গন্ডগোল লেগে গেছে। অতি সহজ ও সিম্পল হিসাবটা ৬মাসে মিলাতে পারিনি। একেরপর এক প্রানী এক্সপেরিমেন্ট করিয়ে চলেছি। কাজ হচ্ছেনা। ওজনে তারতম্য পাওয়া যাচ্ছেনা।
তাহলে কি, ঘুমানোর সময় আত্মার সাময়িক দেহত্যাগে কি ওজনের কমবেশ হয়না? আত্মাকে কি চিরতরে বাইরে পাঠাতে হবে?
যেইভাবা সেই কাজ!
কয়েকদিনেই মেসরুমটাকে ছোটখাটো ভাগাড় বানিয়ে ফেললাম! কুকুর, কাক, ফার্মের মুরগি, টিকটিকি ইত্যাদি মরা প্রাণীতে রুম বোঝাই। আমার একটাই কাজ, আত্মার ওজন বের করা!
... ... ...
পরিশিষ্ট: মুহিত মহাপুরুষ হতে পেরেছে। জগত সংসারের মায়া কাটিয়ে নিজেকে অন্যস্তরে নিয়ে গিয়েছে। মেস থেকে মুহিতকে বের করে দেয়া হয়েছে। এদিকে "দৈনিক শেষের আলো" পত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমাজ থেকে রীতিমত "পাগলা" খেতাব দেয়া হয়েছে। সবার ধারণা মুহিত পুরোপুরিভাবে পাগল হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু মুহিত থেমে থাকেনি, সুযোগ পেলেই সে তার বিভ্রান্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে আত্মার ওজন বের করা নিয়ে সত্যিই একটু টেনশনে মুহিত।
হয়ত একদিন মুহিত সত্যিই প্রমাণ করে আত্মার ওজন বের করে দিবে।
দেখা যাবে, যে মাছটি আজ জীবিত, চেপা শুটকি বানানোর পর তার আত্মার ওজনও খানিক আউন্স কমে গেছে।
ভালো কথা, আত্মার ওজন পরিমাপের একক কি হবে তখন?
উদ্ভাবকের নামানুসারে হবে?
১ মিহি আত্মা, ১ ন্যানো-মিহি আত্মা,,,এরকম কিছু?
তবে আমার আত্মার ওজনটা কত?
... ... ...
তারিখঃ ৫১০২/৪০/০৩.
মুহিতকে দেখা যাচ্ছে। তবে মুহিত আজ হাটছেনা, দৌড়াচ্ছে। আর তার পিছে দৌড়াচ্ছে একপাল কুকুর। কুকুরগুলো কেনো হঠাৎ এমনটা করছে তা বুঝতে পারছেনা।
মুহিত কি মহাপুরুষ হয়ে গিয়েছে?
তার IQ লেভেল দেখলে কি, মেনসা'র উচ্চপদস্থ মেম্বার্সরাও আতকে উঠবে?
... ... ...
(ঘটনার আগের ঘটনা)
পারুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারছিনা, আমার কি করণীয়।
আগামী সপ্তাহে বিয়ে, এংগেজমেন্ট সেরে নিয়েছে আরোও দেড়মাস আগে। কিন্তু সমস্ত খবর আমি শুনছি কেবল, মেঘের মুখে!
- মুহিতদা, তুমি পারুদি কে নিয়ে পালিয়ে যাও। সমস্ত ব্যাকআপ আমি দিচ্ছি। একদম চিন্তা করোনা তুমি।
- পালিয়ে কি করবো? দরকার নেই, যেমন চলছে চলুক সব।
বলেই বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। মাথাটা কেমন যেনো ফাকা ফাকা লাগছে।
কড়া রোদ চারপাশে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ইস, পকেটে মিনি সাইজের ফায়ার-এক্সটিংগুসার রাখা উচিত ছিলো। আরে ধ্যাত, কিসব আবোল-তাবোল বকছি আমি? আমার তো পকেটই নেই!
- এই মুহিত!
- কে?
- চিনতে পাচ্ছিস না হতভাগা! আমি তোর বাবা।
- ও বাবা! বল
- তোকে এত অস্থির দেখাচ্ছে কেনো?
- কই নাতো!
- মিথ্যা। অস্থিরতা তো তোকে শোভা পায়না! এখুনি ঝেড়ে ফেল বলছি!
- বাবা, নাক ঝাড়ার মত ঘোৎ করে অস্থিরতা ঝেড়ে ফেলার টেকনিকটা কি জানা আছে তোমার?
- বেয়াদবি করবিনা একদম!!
- আচ্ছা
- তো, এখন বর্তমান করছিস কি, বলতো শুনি?
- আত্মার ওজন বের করছি
- বলিস কিরে! আত্মার আবার ওজন হয় নাকিরে!
- কেনো হবেনা? আলবাৎ হবে!
- হবে বলছিস?
- হু
- বড্ড জটিল বিষয় তো খোকা! ভাবতে হবে।
- আচ্ছা তুমি ভাবতে থাকো, আমি গেলাম
- হু
অসহ্য! আমার মাথা কাজ করছেনা এমনিতেই, তার উপর বাবা লেকচার দিয়েই যাচ্ছে!
তবে, হুট করে যে আত্মার ওজন নিয়ে বললাম, এটা কি পরাবাস্তব কিছু বলেছি কি? চাইলেই আত্মা ওজন করা যায়। তবে লাগবে সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা। তবে আপাতত মুদি দোকানির বাটখারাতেই কাজ সারব।
খুজে খুজে এক কুকুরছানা পেলাম। নর্দমার ধারে পড়ে ছিলো। তুলে এনে আচ্ছামত গোসল করিয়েছি, খাইয়েছি। মেসের ম্যানেজার সাহেবের তো চোখ ছানাবড়া! যদিও মুখে কিছু প্রকাশ করছেন না। আমি গুরুত্ব দিচ্ছিনা। কুকুরটাকে ঘুম পাড়াচ্ছি।
লজিকিটা সিম্পল:
আমরা জানি, ঘুমালে আত্মা দেহ ছেড়ে সাময়িকভাবে মুক্তি নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। মানে এই দাড়াচ্ছে, ঘুমাবস্থায় আত্মা দেহের বাইরে থাকে। তাহলে, ঘুমাবার আগে সূক্ষ্ম ভাবে ১বার ওজন মেপে নিবো। তারপর ঘুমাবস্থায় আরেকবার।
১টা ওজন থেকে অন্য ওজনের পার্থক্যটাই, আত্মার ওজন।
সহজ ও সিম্পল হিসাব। কুকুরছানাটা ঘুমিয়ে পড়েছে...
(৬ মাস পর...)
অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
আত্মার ওজন হিসাবে গন্ডগোল লেগে গেছে। অতি সহজ ও সিম্পল হিসাবটা ৬মাসে মিলাতে পারিনি। একেরপর এক প্রানী এক্সপেরিমেন্ট করিয়ে চলেছি। কাজ হচ্ছেনা। ওজনে তারতম্য পাওয়া যাচ্ছেনা।
তাহলে কি, ঘুমানোর সময় আত্মার সাময়িক দেহত্যাগে কি ওজনের কমবেশ হয়না? আত্মাকে কি চিরতরে বাইরে পাঠাতে হবে?
যেইভাবা সেই কাজ!
কয়েকদিনেই মেসরুমটাকে ছোটখাটো ভাগাড় বানিয়ে ফেললাম! কুকুর, কাক, ফার্মের মুরগি, টিকটিকি ইত্যাদি মরা প্রাণীতে রুম বোঝাই। আমার একটাই কাজ, আত্মার ওজন বের করা!
... ... ...
পরিশিষ্ট: মুহিত মহাপুরুষ হতে পেরেছে। জগত সংসারের মায়া কাটিয়ে নিজেকে অন্যস্তরে নিয়ে গিয়েছে। মেস থেকে মুহিতকে বের করে দেয়া হয়েছে। এদিকে "দৈনিক শেষের আলো" পত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমাজ থেকে রীতিমত "পাগলা" খেতাব দেয়া হয়েছে। সবার ধারণা মুহিত পুরোপুরিভাবে পাগল হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু মুহিত থেমে থাকেনি, সুযোগ পেলেই সে তার বিভ্রান্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে আত্মার ওজন বের করা নিয়ে সত্যিই একটু টেনশনে মুহিত।
হয়ত একদিন মুহিত সত্যিই প্রমাণ করে আত্মার ওজন বের করে দিবে।
দেখা যাবে, যে মাছটি আজ জীবিত, চেপা শুটকি বানানোর পর তার আত্মার ওজনও খানিক আউন্স কমে গেছে।
ভালো কথা, আত্মার ওজন পরিমাপের একক কি হবে তখন?
উদ্ভাবকের নামানুসারে হবে?
১ মিহি আত্মা, ১ ন্যানো-মিহি আত্মা,,,এরকম কিছু?
তবে আমার আত্মার ওজনটা কত?
... ... ...
তারিখঃ ৫১০২/৪০/০৩.
Post a Comment