-->

কিন্নরী






কিছু মেয়ে আছে যারা সবসময় নিজ ফ্রেন্ড সার্কেলটা মাতিয়ে রাখছে, হাসছে, হাসাচ্ছে...
ঠিক সেই মূহুর্তে সার্কেলের কতিপয় বান্ধবী হাসির ফাঁকেফাঁকে হ্যান্ডব্যাগে লুকিয়ে মোবাইলে প্রেম করছে।
হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটা আড়চোখে সেটা দেখেও দেখে না, হয়ত সেই কয়েক ন্যানোসেকেন্ডের জন্য হাসিটাও স্তিমিত হয়ে যায়।

এই সদাহাস্য মেয়েগুলোর সাথে কখনো কারোও ঝগড়া হয়না, রাগারাগি হয়না, অভিমান হয় না।
মেয়েগুলোকে দেখে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, স্কুল/কলেজ/ভার্সিটির এই সার্কেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মূহুর্ত থেকে এই মেয়েগুলো কি ভয়ঙ্কর একা হয়ে যায়!
সারাদিন যে আপনাকে সঙ্গ দিলো, দিনশেষে সেই মানুষটাই সঙ্গীহীন হয়ে চুপচাপ বসে থাকে...

বিকেল হলে আগে ছাদে বা বাসার সামনের আঙ্গিনায় খেলতে যেতো।
কিন্তু আম্মু এখন বকা দেয়, "অমুক ভাইয়ার সামনে যাবিনা, তমুক ভাইয়ার দিকে তাঁকাবিনা"
মেয়েটা তখন নিজেকে বারান্দার কোণায় গুটিয়ে ফেলে...

কিছুদিন পর বারান্দার অপজিট বিল্ডিং অথবা বারান্দা বরাবর নিচের মাঠে ছেলেদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আম্মু বারান্দায় যাওয়াও বন্ধ করে দেয়!
সারাদিন ঘরে আঁটকে থাকা এই মেয়েগুলো হয়ত একারণেই ফ্রেন্ড সার্কেলে কথার তুবড়ি ছোটায়..
অকারণেই হেসে গড়িয়ে পরে...

কতিপয় বান্ধবীরা এই মেয়েগুলোদের নিয়ে আড়ালে হাসির খোরাক বানায়,
রাত হলে ফোনালাপে প্রেমিককে শোনায়,

- 'জানো বেবি আজ ওই মেয়েটা ফুসকা খেতে গিয়ে প্লেট ফেলে দিয়ে সে কি কান্না!...হাহাহা...স্টুপিড পুরা"
- "কোন মেয়েটা বেবি?"
- 'ওই যে, আমার খেত একটা ফ্রেন্ড আছে বলছিলাম না!...বাঁচালটাইপের মেয়েটা'
- "হু...বাদ দাও তো"
.
.
এই সদাহাস্য মেয়েদের আমি ছোট্ট একটা নামে ডাকি, "কিন্নরী".

এই মেয়েগুলো একটু বোকাধাচের হয়। খুব সহজেই ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যেতে চলে যায় অকপট বিশ্বাসে। অভিমানী হয়, তবে বদমেজাজি না। ক্ষমা করার মত মানসিকতা নিয়ে এরা জন্মগতভাবেই পারদর্শী!

ঠিক ততক্ষণ এরা স্বাভাবিক থাকে যতক্ষণ না কোন বিপরীত লিঙ্গের আবির্ভাব না ঘটছে...

হয়ত কোন ছেলে জন্মদিনের দিন সারপ্রাইজ ভিডিওটেপ দিয়ে উইশ করলো,
নীল পাঞ্জাবি পরে কদমফুল হাতে বারান্দার সামনে দাড়ালো কোন এক বর্ষায় হিমু সেজে,
অথবা রোজ ফেসবুক ইনবক্সে ছোট ছোট কবিতা।

কিন্নরী এই অল্পতেই বিশ্বাস করে স্বপ্ন দেখে ফেলে!
হয়ত সারপ্রাইজ উইশটা নিয়ে কোনরূপ মন্তব্য করবেনা,
কিন্তু পরম যত্নে সাজিয়ে রাখবে লুকানো কোনো ফোল্ডারে.
বৃষ্টিভেজা কদমহাতে দাঁড়ানো ছেলেটার প্রতি বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেও,
বারান্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে ঠিকই ছেলেটার চলে যাওয়া খেয়াল করবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে.
হয়ত ছোট কবির কবিতার রিপ্লে দিবেনা,
কিন্তু রোজ ঠিকই অপেক্ষা করবে কবিতার জন্য!

আচ্ছা, কি মনে হয়?
এগুলা কিন্নরীদের প্রেমে পরার লক্ষ্মণ???
উহু মোটেও না, কারো প্রেমে পরার আগে ১০০বার নিজের কনজারভেটিভ পরিবারের কথা চিন্তা করবে মেয়েটা।
নিজের ভবিষ্যৎ এর কথা ভাববে,
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ছোট তৈরি করে এক পা, দু পা করে পিছিয়ে যাবে...

এই মেয়েগুলো একইসাথে বাস্তবতা আর আবেগের তৈরি ছেঁড়া স্বপ্ন বুনতে পারে।
যদি কখনো সুযোগ পেয়ে যান, আঁকড়ে ধরে রাখুন এদের...খুব সম্ভবত জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সম্পদের একটি পেয়ে যাবেন!



কোথায় যেনো শুনেছিলাম,
- "সব মেয়েরা জন্মগতভাবে 'হৈম' হলেও,
সব ছেলেরা 'হিমু' হতে পারে না."

হ্যা, সব মেয়েরাই জন্মগত 'হৈম' কিন্তু 'হিমু' তো সহজ একটি ভং!
চাইলেই কি আর নিজের 'হৈমসত্বা' কে আগলে বেঁচে থাকতে পারছে সব মেয়ে?

আমি তাই 'হৈমে' বিশ্বাসী নই, আমি বিশ্বাসী 'কিন্নরীতে'...

কিন্নরীরা বয়ামে রাখা কাঁচপোকা, যাদের বয়ামের মাঝেই সমস্ত অস্তিত্ব...
বনের জোনাকীর মত মুক্ত তারা নয়!
এটা এক আলাদা সৌন্দর্য. এমনি কোনো কিন্নরীর জন্যই হয়ত কবি লিখেছিলেন,

"ঘাড় গুঁজে দিন
লিখতে লিখতে,
ঘাড়ঁ গুজে রাত
লিখতে লিখতে,
মুছেছে দিন-মুছেছে রাত
যখন আমার লেখার হাত
অসাড় হলো,
মনে পড়ল,
সাল কি তারিখ, বছর কি মাস
সেসব হিসেব আর ধরিনি.

লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি,
এক পৃথিবী লিখব বলে,
একটা খাতাও শেষ করিনি..."
- জয়গোস্বামী


হু,,,কিন্নরীদের নিয়ে চাইলেও এক পৃথিবী লেখা হয়ে ওঠেনি!

"ভালো থাকুক তাঁরা".

... ... ...

তারিখঃ ৬১০২/৫০/৭০
লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ