নীলচে আলোর ধুপ
আমি কখনো একা একা চা খেতে পারিনা। আমার মনে হয়, চা খেতে হয় অন্য কাউকে সামনে বসিয়ে।
এক চুমুক খেয়েই চোখ তুলে তাঁকাবো, দেখব অন্যজন ঠোট গোল করে ফুঁ দিচ্ছে। সে চুমুক দিয়ে তাঁকানোর আগেই আমি চোখ নামিয়ে ফেলবো।
তবে এমন সাধারণত হয়না, তাই আমিও খুব একটা চা খাই না...
তবে আজ নিয়ম ভেঙেছি। আমি একা একাই চা খাচ্ছি। বরং বেশ আয়েশ করেই খাচ্ছি।
ছেলেটা এত হন্তদন্ত হয়ে চা বানিয়ে আনলো, আর আমি খাবোনা?!
তবে তাড়াহুড়োতে ছেলেটা চিনি দিতেই ভুলে গিয়েছে। আমি এর আগে কখনো চিনিছাড়া চা খেয়ে দেখিনি। খেতে খুব একটা মন্দ লাগছেনা!
আমি অল্প অল্প করে চা টা খাচ্ছি, যাতে ফুরিয়ে না যায়।
ছেলেটার ছবি আঁকার এখনো অল্প কিছু বাকি। শুনেছি খুব ভালো নাকি ছবি আঁকতে পারে, কচু! ইয়া লম্বা আঙুল দিয়েছে, আমার আঙুল কি অত লম্বা নাকি!
যাহোক, আমি বসে আছি অগোছালো বাসি বিছানার উপর।
অন্যসময় আমি কখনোই এখানে বসতাম না, কিন্তু ছেলেটার তাড়াহুড়ো করে ঘর গুছানো দেখে হাসতে হাসতেই বসে গেলাম। এখন খেয়াল করে দেখলাম, ঘরে বসার জন্য একটাই চেয়ার আছে। আর সেটাতে বসে আছে চাশমিস ছেলেটা...
এই হাদারাম টাইপের ছেলেটাকে নাকি বিয়ে করতে হবে আমায়। কেমন ড্যাবড্যাব করে ভিতু চোখে তাঁকিয়ে থাকে! দেখলেই হাসি পায়..
- 'আপনার নামটা কি যেনো?'
- 'আনিসুল বাশার'
- 'ও..'
মনে মনে ভাবলাম, কি ক্ষেতমার্কা নাম! বিয়ের কার্ডে লেখা থাকবে, "আনিসুল বাশার - হুমাইরা তিতলী".
ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে!
একি! আমিতো বিয়েটা ভাঙতে এসেছি। উলটো এই হাদারামটার সাথে বিয়ের কার্ডে নাম বসাচ্ছি! উহহু, এক বিশেষণে কাজ হচ্ছেনা। হাদারাম তথা হাইব্রিড ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, কেনো যে ম্যা ম্যা করছেনা!
ছাগল বলবো না তো কি বলবো?
ছবিতে চুলের রঙ করেছে কমলা রঙের, আমার চুল কি বিলেতি ম্যামদের মত রঙিন নাকি? ছাগল একটা!
চা টা বেশ গরম। এখনো ধোয়া উড়ছে।
প্রতিবার ফুঁ দেয়ার সময় চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। এতে খুব ঝামেলা হচ্ছে, আমি হাদারামটাকে দেখতে পারছিনা। এই প্রথম চশমার কাঁচে ১টা ওয়াইপারের প্রয়োজন অনুভব করলাম।
ছেলেটার ছবি আঁকা প্রায় শেষ।
একটুপরেই উঠে যেতে হবে আমাকে, কিন্তু চিনিছাড়া চা টায় নেশা ধরে গেছে। আরেককাপ খেতে ইচ্ছে করছে।
হাদারামটা চায়ের সাথে কিছু মেশায়নি তো?
উঠে গিয়ে কলার ধরে কড়া গলায় ধমক দিলেই সব বলে দিবে। কিন্তু উঠতে ইচ্ছা করছেনা...
... ... ...
ছবি আঁকা প্রায় শেষ।
এখন আর দেখতে অতটাও খারাপ দেখাচ্ছেনা ছবিটা। হয়ত অনেকক্ষণ ধরেই তাঁকিয়ে ছিলাম তাই। চুলের কমলা রঙটাই বেশ লাগছে, বরং ওটা অন্য রঙ হলে বুঝি মানাতো না।
কাপে আরেকটু চা বাকি রয়েছে। ছবি সমেত কাগজ হাতে সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাদারাম ছেলেটা।
ছেলেটার ভয় পাওয়া চেহারায় উৎকণ্ঠা আর বিরক্তি মিশে আছে। দেখতে এখন অতটাও খারাপ লাগছেনা।
চায়ের কাপে শেষ ফুঁ দিতে দিতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তিতলী। চশমার কাঁচটা ঘোলা হয়ে রয়েছে।
অপেক্ষা করছে, কাঁচটা পরিষ্কার হয়ে গেলেই ছেলেটাকে বলবে সে,
- 'এই যে হাদারাম, পরেরবার থেকে চায়ে চিনি আরেকটু কম করে দিবেন। সারাজীবন এভাবেই ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে থাকবেন, আর আমি বুড়ি হলে পার্লারে যেয়ে চুলটা কমলা রঙের করিয়ে দিবেন, ঠিকাছে??'
তিতলী জানে, সে মোটেও ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেনা।।
... ... ...
লেখা: রোড নং ছত্রিশ!
তারিখঃ ৫১০২/২১/৯০
Post a Comment