তুই আমায় লিখতে দিবি?
... ... ...
প্রচন্ড আক্ষেপসূচক কিছু শব্দ নিয়ে বেঁচে আছি ৪ মিনিট।
রেললাইনের পাতের মত বেড়ি দিয়ে সীমান্ত অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হয়েছে আমায় খানিক পরপর।
অযথা কিছু যুক্তবর্ণ আর বেখেয়ালি সব ভুল বানানে ভরিয়ে আকাশী কাগজে আবছা হলুদের ছোপ আমার শরীরজুড়ে।
আমি হলাম এক মৃতকবির বেঁচে যাওয়া কবিতা...
নাম নেই আমার।
শুরুটুকু গোছালো হলেও, শেষটা একেবারেই যা-তা.
.."কালির কলম ফুরিয়ে গেলো আবেদনপত্রে,
তবু প্রেমিকার সতেজ ঠোঁট শুকালোনা!"..
এরকম বেশকিছু উস্কানিমূলক শব্দ আমাতে থাকলেও,
আমি কিন্তু মোটেই ১৮+ নই।
কবিতায় বিনাদ্বিধায় ধর্ষণ করা যায় প্রাক্তন প্রেমিকাদের, এতে নষ্টামি নয়
বরং তৈরি হয় কিছু বৈধ মুগ্ধতা।
.
- 'তারপর পিছনে ফেলে নাগরিকতা, এগিয়ে গেলাম ধম্মতলায়।
খুচরোতে একপ্লেট গরম ভাত না জুটলেও,
জানি ধম্মতলার বেশ্যা ফেরাবেনা আমায়'.
- "জাত যাবে তো!."
- 'যে জাত ভাত দেয়না, সে জাত অজাতশত্রু'..
- "আর চাকুরীটার কি খবর?"
- 'হাহাহা, জাতের হর্তাকর্তারাই তো টেবিলের ওপারে বসা, চাকুরী আর মিললো কোথা?'....
আমার কবি শেষ বয়সে বাজামেয়েদের পাল্লায় পরেছিলো।
সরকারি চাকুরী, বিনমলা দেবী, ধ্রুবলেনের দোতলার বাড়ি সব খুইয়ে
দুদন্ড রতিসুখের দরজায় মাথা ঠুঁকেছিলো রোজ।
ছেলে কলেজের ফী খুঁজতে গেলে পাশে বসিয়ে,
দু-চার লাইন কবিতা শুনিয়ে দিতো।
.."সস্তা কলেজের বারান্দায় দাড়িয়ে কখনো কি ন'তলা বিল্ডিঙের উপরের সূর্য ধরা যায়?
দেখছিস না, দুনিয়াটা কেমন চিপসে নীমতলা হয়ে যাচ্ছে!
স্নিগ্ধ কিছু সরেস শব্দের চাষাবাদে নেমে যা,
লাঙ্গল-কলম-জমি-কাগজ আমি দিচ্ছি"..
ছেলেটা নিঃশব্দে উঠে যেতো।
বেশ বুঝতে পারতাম "আমি" মানে কবিতা বলতেই
সে ধরে নিয়েছিলো উন্মত্ত প্রলাপ!
... ... ...
বাজামেয়েটার নাম চন্দনী, জাতে মোসলেম।
বেজাত মেয়েটার সরু কোমড় আর দীঘলকেশের প্রেমেই মজেছিলো বুড়ো ভাম।
রোজ একপাতা কবিতা নিয়ে আমার কবি ঢুকে যেতো পল্লীতে,
নিঃশব্দে খুঁজে নিতো নির্দিষ্ট ঝুপড়িটা।
প্রায়ই ভেতর থেকে তীক্ষ্ণ শিৎকার শরীরে জ্বালা ঢেলে দিলেও, অপেক্ষার নম্রশাসনে শাসাতো নিজেকে।
কপালের ঘাম মুছতে মুছতেই কবিতাগুলো পড়ত মেয়েটা।
তারপর গা শিরশিরে হাসি দিয়ে বলতো,
.."বাবু, আজ ছন্দে কাঁপুনি এলোনা। বিছানায় এসো, আজ তোমায় সনেটের ছন্দে মাতাবো"..
শুরু হতো ব্যবচ্ছেদ।
আমার কবি যখন মুগ্ধ নয়নে চন্দনীস্নাত হতো,
আমি তখন দুমড়ে থাকতাম সেমেটিক সভ্যতার আড়ালে।
সীমান্তের চৌকাঠে ছিন্ন খনির মাতম তুলে কবির শেষ ফোঁটাটাও সে রাক্ষসীর মতন শুষতো,
আমি তখন সনেটের অষ্টকে দাঁড়িয়ে ভিন্ন ধ্বনির স্বপ্নে আক্রান্ত।
... ... ...
প্রচন্ড আক্ষেপ নিয়েই শেষবার কবি এসেছিলো ধম্মতলায়।
সীমান্তে জাত-বেজাতের কুঁদন শুনে ভয়ে ঠাঁই নিয়েছিলো চন্দনীর কাছে।
.."ওরা আমায় খেতে দেয় লিখতে দেয়না, চন্দনী তুই আমায় লিখতে দিবি?"..
ধ্রুবলেনের দোতলায় ভাঙচুর,
- "বুড়ো আবার শেকল ভেঙেছে!"
আর আমি তখন ৪ মিনিটের আয়ু পেয়ে রেললাইনের পাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছি।
অযথা যুক্তবর্ণ আর বেখেয়ালি বানান ভুলের দায়ে ওরা আমার কবিকে দিয়েছে মৃত্যুদণ্ড...
😶
তারিখ: ৭১০২/৯০/৮০.
লেখা: রোড নং ছত্রিশ.
লেখা: রোড নং ছত্রিশ.
Post a Comment