-->

আত্মহত্যার পিছনের ঘটনার খলনায়ক



রিচিত কেউ সুইসাইড করেছে?
বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজফিডে মর্মান্তিক কোনো বিষয়ে কষ্ট পেয়ে সুইসাইড করা কারোও গল্প বারবার আপনার সামনে আসছে?

তবে আজ থেকে কেউ সুইসাইড করলে সেই মানুষটাকে নিয়ে আলোচনা/সমালোচনা বা যাবতীয় মাতামাতি বনহজ করুন। মৃতব্যক্তির প্রতি ততটাই শ্রদ্ধা/কষ্টপ্রকাশ করুন, যতটা করলে অন্য কারোও ক্ষতি না হয়।

এটুকু পড়ার পর আপনি আমার দিকে তেড়ে আসতে পারেন কয়েকটা প্রশ্ন নিয়েঃ

১. কারোও প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন/কষ্টপ্রকাশ করলে অন্য মানুষের কিভাবে ক্ষতি হয়?
২. ওই মিয়া সুইসাইড কি কেউ শখে করে নাকি!?
৩. না জেনে ফাউ বকবেন না। আপনি কখনো তার জায়গা থেকে ভাবতে পারবেন না। হুদাই জ্ঞান দিতে আইসেন না তো মিয়া!

... ... ...



সুইসাইড কেনো করে মানুষ? 
 
এই প্রশ্নটার উত্তর নানাভাবে নানাজনে দিয়ে যেতে চেয়েছে বহুবার।
তবে সবচেয়ে বেস্ট জবাবটা হয়তো ওই লোকটাই দিতে পারতো যে গতকাল রাতে সুইসাইড করেছে।
কিন্তু যেহেতু সে বেঁচে নেই, তাই তার সুইসাইড করার কারণটাও পুরোপুরিভাবে জানা কোনোদিনই সম্ভব না।
আপনি আমি কারণটা বড়জোর অনুমান করে নিতে পারি তার রেখে যাওয়া বিভিন্ন সূত্র মিলিয়ে মিলিয়ে।
কিন্তু অনুমান তো অনুমানই তাইনা?

আচ্ছা কেউ সুইসাইড করলে আপনি তাকে সাপোর্ট করবেন? হোক সে আপনার পরিচিত বা অপরিচিত।
পরিচিত হলেতো কথাই নেই, আপনি নিশ্চয়ই চাননা আপনার ভাইটার লাশ কাল সুইসাইড নোটসমেত পান!

অপরিচিতদের ক্ষেত্রেও তাই। একটি প্রাণ চলে গেছে। একটা মানুষ মারা গেছে। একজন মানুষ হিসেবে আরেকটা মানুষের প্রাণ চলে যাওয়াটা তো নিশ্চয়ই আনন্দের কিছু না।
তাই অপরিচিতদের জায়গা থেকেও সাপোর্ট আসা উচিত না।
কিন্তু আফসোস, প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে এই সুইসাইডটাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি আমরা।

... ... ...




সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি কিভাবে?

আপনার আমার একেকটা কষ্টমাখা স্ট্যাটাস, একেকটা দুঃখভরা গলায় অন্য আরেকজনকে কল করে জানিয়ে দেয়া,
- "আর নেই রে আর বেঁচে নেই! সহ্য করতে না পেরে চলেই গেলো সে"

আপনার কষ্টপ্রকাশের নিয়ত নিয়ে কোনো আপত্তি নাই আমার।
আমার আপত্তি হলো আপনার এই কষ্টপ্রকাশে সমাজটা আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন।

আপনার এইটাইপ মরণোত্তর সম্মান দেখানো স্ট্যাটাস/খারাপ লাগা প্রকাশ করা উচিতই না কোনোভাবে।
কেনোনা এভাবে সুইসাইড করা মানুষদের প্রতি সবাই কনসোলেশন দেখাইলে, আগামীকাল আরোও একটা সুইসাইড হবে।

হয়তো আপনি নিজের অজান্তেই আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের একজন ডিপ্রেসড মানুষকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন,
- "দেখ দেখ, সুইসাইড করলেই আমার/এই সমাজের এটেনশন কিভাবে মিলে! সুইসাইড না করলে আমার স্ট্যাটাসে তোমাকে ট্যাগ করতাম কোনোদিন?"

আপনার এখন আমার এই দৃষ্টিভঙ্গিটাকে অসুস্থ মনে হতেই পারে। ভাবতেই পারেন,
- "ছিঃ লোকটা কি জঘন্য মাইন্ডের! একটা লোক সুইসাইড করে মারা গেছে সেটায় কষ্ট পেয়ে আমি স্ট্যাটাস দিছি।
আর এতেও রাজনীতি খুঁজে ফেললো লোকটা!!"

কিন্তু বিশ্বাস করেন, দিনশেষে আমি আপনি কখনো সুইসাইড করতে যাচ্ছিনা। কারণ, আমরা জানি একটা প্রাণের মূল্য কত। আমরা জানি, সুইসাইড ছাড়াও প্রবলেম সলভ করা যায়।
আমরা এটা জানি বলেই কেউ সুইসাইড করলে আমাদের কষ্ট লাগে, আফসোস লাগে।

কিন্তু ওই মানুষটা আপনার আমার মত করে চিন্তা করেনা। তাদের কাছে প্রাণের চেয়ে, প্রবলেমটাই বড় হয়ে যায়।
তারা ধরেই নেয় তাদের পৃথিবীতে কেউ নেই। কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি একবারও। তারা আপনাদের প্রতিটা স্ট্যাটাস দেখে আর এটাই ভাবে,

- "অমুকে মরার পর নিউজে এসেছে, প্রবলেমটা সবার নজরে এসেছে। কিন্তু যদি না মরতো কেউই প্রবলেমটা নিয়ে মাথা ঘামাতোনা।
তাহলে মরে গিয়েই, সবার চোখে আঙুল দেয়া উচিত।"

... ... ...

আসলেই তো তাই!
আপনার একেকটা স্ট্যাটাসই প্রমাণ করে তাদের ধারণা কতটা সঠিক।
একটা মানুষ মরে যাওয়ার পরই আমরা তাদের দিকে তাঁকাই। তাদের ট্যাগ করে ছোট্ট একটা স্ট্যাটাস দিই। কষ্টপ্রকাশ করি।

অথচ বেঁচে থাকতে একদিনও ইনবক্সে আগ বাড়িয়ে খোঁজ নেইনা, একটা কল দেইনা। জানতে চাইনা মুখের দিকে তাঁকায়ে, "ভাই ভালো তো?"

এই মানুষটা মরার পরই কেনো আপনার দরদ উথলে ওঠে?
নাকি আপনার এই করুণামাখা স্ট্যাটাস বা দরদটুকু তাকে মৃত্যু থেকে ফেরত আনবে?

... ... ...



কেউ সুইসাইড করলে সেই মানুষটার প্রতি ততটাই শ্রদ্ধা/কষ্টপ্রকাশ করুন যতটা করলে অন্য কারোও ক্ষতি না হয়।

যদি কিছু করতেই হয়, তবে ওটাই করুন যেটার জন্য মানুষটা মারা গিয়েছে।
সেই প্রবলেমটা সলভ করুন।
যাতে দিনশেষে আরেকটা "সুইসাইড নোট" আপনার সামনে না আসে।

তাদের মনে মনে মিস করুন। এভাবে এটেনশন দিয়েন না। কারণ, আপনি যেহেতু আপনার আশেপাশের সবার লাইফ ঘেটে দেখতে পারছেন না।
আপনি বুকে হাত দিয়ে এটাও বলতে পারেন না, আপনার আশেপাশে কোনো ডিপ্রেসড মানুষ নেই।

দয়া করে মরে যাওয়ার পর লোক দেখানো শোকগাথা বন্ধ করুন। আর নয়তো আগে শিওর হয়ে নিন, আপনার আশেপাশে আর কোনো ডিপ্রেসড মানুষ নেই।

আমি কি বুঝাতে চেয়েছি যদি বুঝতে না পারেন, বুঝাতে না পারাটা আমার ব্যর্থতা। আমাকে আস্ক করেন কি বুঝেন নাই, আপনাকে আরোও কিছুক্ষণ বুঝাই।
তবুও সুইসাইডকে সাপোর্ট করা কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন এটাই চাই।

আর যদি বুঝে থাকেন, কি বলেছি, এবং এরপরেও যদি মনে হয় "আপনার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে, আপনার পার্সোনাল লাইফে আপনি কি করবেন তা আমি ঠিক করে দিতে পারিনা!"

তবে আপনাকে থ্যাংক্স.
হয়তো আরোও একটা সহজ জীবনকে জটিল সমীকরণের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মেপে ইতিমধ্যে মৃত্যুতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন আপনি।

আপনাদের একেকটা নিউজ, একেকটা কল, একেকটা স্ট্যাটাস বা কমেন্টে দেখানো এটেনশনের চেয়ে,
আমার কাছে একটা প্রাণের মূল্য অনেক বেশি।
... ... ...

লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ
তারিখঃ ৯১০২/১০/১৩.