-->

আমার ভীতু ভালোবাসার কবিতা


... ... ...

স্টেশন থেকে নেমে যখন এদিক ওদিক তাকিয়ে তোমাকে খুঁজছিলাম
আমার মনে প্রথম যে চিন্তাটা এসেছিলো,
"আচ্ছা আমি কি তোমাকে দেখে দৌড় দিবো?"

- আপাতত এটাকেই এই কবিতার শিরোনামে জুড়ে দেয়া যাক।
এরচে ভালো কিছু আর হয়না।

ভেবেছিলাম দৌড় দিবো কিনা সোজা নাক বরাবর? কিন্তু তা হয়নি।
আসলে আমরা ভালোবাসাকে যেভাবে কল্পনায় আনতে চাই, সামনা-সামনি চলে আসার পর
ভালোবাসাগুলো বদলে যেতে থাকে দ্রুত।
তাই আমিও দৌড় না দিয়ে আমার সবচেয়ে ভালো শার্ট, প্যান্টটা গায়ে জড়িয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
তোমার মনে হলো, আমি শার্ট-প্যান্টের রঙ মিলিয়ে মিলিয়ে এসেছি। আসলে তা কিন্তু না।

আমি সারারাত না ঘুমিয়ে কয়েক হাজার টাইমলাইন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুধু এটাই ঠিক করেছিলাম,
তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আমি কি কি করবো!
এবং সেই কয়েক হাজার টাইমলাইন ঘেটে তোমার সামনে দাড়াবার পর
আমার মাথায় সবচেয়ে জোড়ালো যে শব্দটা বাড়ি দিয়েছে তা ছিলো,

"Hi!"

… … …

আমি জানি ভালোবাসার কবিতা লিখতে হলে ভালোবাসতে জেনে নিতে হয়।
অনেকটা যেমন লিখতে লাগে কলম,
বা বুক ভরে শ্বাস নিতে চাই অক্সিজেন।
এরেঞ্জ ম্যারেইজের কাপলের মত, তোমার সামনে না আসার আগ অবধি আমি জানতামও না,
"ভালোবাসা কাকে বলে?"

আমি অত ভালো প্রেমের কবিতা লিখতেও পারিনে।
কিন্তু এই মূহুর্তে জোর করে আমায় একটা কিছু যদি লিখতেই হয়
আমি লিখবো, তোমাকে নিয়ে।

তোমাকে নিয়ে লেখা মানে অনেকটা ঘুমবালিশে চোখভেজানো উষ্ণ উষ্ণ উত্তাপ।
আমার গা গরম হয়ে যায় ওতে, পুড়েনা।
ঘেমে নেয়ে যাই টপটপ কপালে, ডুবিনা।
আমার ডাক্তার প্রেসক্রাইব করে ফেলে, দুটো এইস, দিনে দুইবার।
কিন্তু অমন নেশাচোখে কেউ আমার দিকে দেখেনা।
তুমি বরং আমার হৃদযন্ত্রের এক্সট্রা পেসমেকার হয়ে যেতে,
প্রতি স্পন্দনে আমাকে অন্তত এটা ভেবে কষ্ট পেতে হতোনা
আমার হাতদূরত্বে তুমি নেই।

হয়তো আমি খুব ভালো প্রেমের কবিতা লিখতে পারিনা ঠিকই,
তবে এই মূহুর্তে যদি লিখতেই হয় কিছু
আমি লিখবো, তোমাকে নিয়ে।

আমি তোমাকে নিয়ে লিখতে যতবার চাই
নিজেকে পাটিগণিতের মত 'মনে করি' দিয়ে শুরু করে,
ঐকিকের কাটাকুটি রেখে চলে যাই সোজা ভোরবেলা চারুকলার বারান্দায়।
যেখানে স্নেহের আতিশয্যে গলাগলিতে আমাদের ছোট ছোট অবাধ্য সব স্পর্শেরা!
জানি মাঝরাতে মাথা ঘুরিয়ে দুজনেই উলটে ছিলাম খুব,
তবু শাটলের শেষ সিটে অন্ধকারে চুমু খেয়ে
'কেউ দেখলো কিনা' উৎসুকভাবে তার খোঁজ রাখতে ভুল হয়নি দুজনের কারুরই।

হয়তো আমি খুব ভালো প্রেমের কবিতা লিখতে জানিনা ঠিকই,
তবে এই মূহুর্তে যদি লিখতেই হয় কিছু
আমি লিখবো, আমাদের নিয়ে।

… … …

আমি লিখবো কিভাবে গতকাল স্বপ্নে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলছিলাম বারবার।
সুমেরীয় সভ্যতায় জন্মানো বুনো হাতি হয়ে
সারাটাদিন এদিক সেদিক ঘুরেফিরে বল্লমের খোঁচা খেলাম সোজা বুকে।
আর তুমি রাজপুরোহিতের মেয়ে,
আমার দৃঢ় শৃঙ্গের পেয়ালায় নিলে প্রথম মদের স্বাদ।
আর ওতেই, ঠিক থুতনির উপরের জায়গাটাতেই
আমি যেনো মরে গিয়েও মরে গেলাম আরোও কয়েক হাজারবার।

পরেরবার যখন জন্মেছি তখন আমি শুয়োপোকা।
গুটিগুটি মেরে প্রজাপতি হয়ে তোমার নরমে গা ঘেষতেই টোকা দিলে সোজা ঘাসের জঙ্গলে,
ডুবে গিয়ে পা মাড়াতেই অস্ফুটে মরে যেতে যেতে শেষবার যা স্মৃতিতে ধরেছিলাম,
তোমার হাতের ঘন বাদামী দুটো তীল।

এভাবেই জন্ম-মৃত্যু ঠেলে বারবার আমি ফেরত আসতে চাইলাম তোমার কাছে।
তোমার কানের লতিতে ফু দিলাম, ঘাড় বাঁকালে, তাঁকালেনা।
তোমার রাস্তার পাশের উড়ে যাওয়া ঠোঙা কাগজে শব্দে শব্দে ডাকলাম,
পাশ কাটালে, পড়লেনা।
তোমার কপালের টিপ থেকে নোজপিন হয়ে গলা থেকে পিঠের হুক সর্বত্র ছড়িয়ে যেতে যেতে আঁকড়ে ধরতে চাইলাম প্রচন্ডভাবে!
বিনিময়ে তুমি আওড়ালে শুধু একটি শব্দ,

"ঘুমাবো".

আমি মরে গেলাম।
ওরা আমাকে মাটিতে পুতে দিলো।
খুব অল্প বয়সে মরে যাওয়া এক ব্যথাতুর ঝিঁঝিঁর মত একঘেয়ে সূরে ডেকে ডেকে আমিও চুপ হয়ে গেলাম।
এত অল্প বয়সে মরে যাওয়ার ব্যথাটাতো অল্প না।
তোমাকে আরোও একবার দেখবার আশায় ঘুম ভেঙে উঠে কাঁদলাম ছোট বাচ্চার মত।

... ... ...

স্বপ্ন!
এসবই ছিলো অনামুখো স্বপ্ন!
সারাটাদিন আমি বুকে হাত দিয়ে নিজেকে বুঝাতে চাইলাম, এসবই স্বপ্ন।

ভীতুর ডিম কোথাকার!
এত ভীতু বলেই হয়তো আমাকে দিয়ে কোনো ভালো প্রেমের কবিতা হয়না কখনো,
কিন্তু আমাকে যদি এখন লিখতেই হয় কিছু
আমি লিখবো, তোমার প্রতি আমার তীব্রতা নিয়ে।

যে তীব্রতায় তোমার হাত ধরতে গেলেই সবসময়,
না সবসময় না মাঝেমধ্যে, আমি শক্ত করে চেপে ধরি তোমার হাত আমার বুকে খুব?
আমি সরি, আমি ব্যথা দিতে চাইনা ওভাবে।
আমি কেবল এটুকু বুঝ নিজেকে দিতে চাই,
এটা স্বপ্ন নয়, এটা স্বপ্ন নয়।
আমি তোমাকে হারাতে চাইনা।

এভাবে বারবার আমাকে যদি লিখতেই হয় কিছু
আমি লিখবো ঠিকই,
খুব ভালো কোনো প্রেমের কবিতা নাও হতে পারে।
নাহোক, তবু আমি লিখবো,
আমার হাত ধরে তোমার গালে চেপে ধরে আরোও একটু থাকার আকুতিটা।
নরম ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে নিজেকে পিষে মেরে ফেলতে থাকার প্রশ্রয়টা।

তোমার আমার প্রতি,
আমার তোমার প্রতি কি নিদারুণ
মাঝের কয়েকশো কিলোমিটারের দূরত্বটা,
কয়েকশো কিলোমিটারের বোবা তীব্রতা।

... ... ...


তারিখঃ ৯১০২/৭০/৮১
লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ.