-->

বাঁদর মানুষ করার দূরুহতা


... ... ...

চোখ বন্ধ করে দৈবে বিশ্বাস এইদেশের মানুষই কেবল করেনা।
হাজার বছর আগের নর্ডিক উপগাঁথায় বা গ্রিক বা মিশরীয় দেবদেবী বা পেগানদের মধ্যেও এই দৈবে বিশ্বাসের আচার ছিলো।

যখন কোনো কাজের দায় নিজের হাতে রাখতে পারেনি মানুষ, তখন তা দৈবের উপর ফেলে দিয়েছে। এবং কেউ কেউ দায় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, উক্ত দৈব চরিত্র কেন্দ্র করে খুশি করার নিমিত্তে বিভিন্ন ধার্মিক আচার অনুষ্ঠান, নৈবেদ্য প্রদান, বলি ইত্যাদি পালন করে এসেছে যুগের পর যুগ।

ইতিহাস সেই কাহিনী গুলোকে উৎকৃষ্ট সংস্কৃতির রেফারেন্স হিসেবে গুরুত্বও প্রদান করে। তাহলে হুট করে এই বাঙালদের নিয়ে কেনো মাথাব্যথা উঠে গেলো বুঝলাম না।
কেনো আপনারা বারবার চিল্লাচ্ছেন ধর্মান্ধতা ছেয়ে ফেলছে দেশকে! মুক্তি চাই! মুক্তি!

কেউ হয়তো দাবী করে,
"বাঙালদের নিয়ে মাথাব্যাথা হবার
কারণ আমি নিজে বাঙালি। স্বজাতির কর্ম ও বিশ্বাসকে পর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ আছে আমার। আর প্রাচীন গ্রীক, সেমিটিক প্রমুখদের সাথে বাঙালির সাথে পার্থক্য যথেষ্ট। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ওরা যেখানে রিয়েলিটি মেনে নিয়েছে, আমরা এখনো দেবতাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাচ্ছি।"

... ... ...

আসলেই কি তাই?
আপনি সত্যিই মনে করেন, একটা গোটা জাতি উন্নতি করতে পারেনা, পিছিয়ে থাকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার জন্য?

দেখেন কথাটি ততক্ষণ অবধি মেনে নেয়া যায় যখন আপনি আমাকে কয়েকটা জিনিস দেখাতে পারবেন।

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কে কতটুকু উন্নতি করলো, এই উন্নতির পুরোটাই নির্ভর করছে সেই মানুষ/গোত্র কোন ধরণের সুযোগ পেয়ে বেড়ে উঠছে। সেই মানুষ/গোত্র দৈবে মানলো কি মানলোনা তার উপর নির্ভর করে নয়।

আবার এটাও যদি হতো, আমার দেশের আপামর জনসাধারণ ধর্মীয় গোড়ামি নিয়ে পরে আছে হাত গুটিয়ে, কেউ নিজের আত্ম উপলব্ধির জায়গা থেকে কিছুই করছেনা, তখন নাহয় একটা ভাবার বিষয় ছিলো।

তা কিন্তু হচ্ছেনা।
আদতে একটা/কয়েকটা/অনেককটা অংশ কিন্তু ঠিকই "বৈশ্বিক পরিস্থিতি মেনে তাল মিলিয়ে চলছে", দেশকে টিকিয়ে রাখছে।

তাহলে যে গুটিকয়েক গোত্র/দল যারা নিজেদের কুন্ডলির বাইরে আসতে চাইছেনা তাদের কি করবেন?
তিরস্কার করবেন?
ধর্মান্ধ, বর্বর বলে গাল দিবেন?
তাদের পিঞ্চ করে সোশ্যাল মিডিয়া ভাসাবেন নিজেদের উন্নত প্রমাণের জন্য?

এটা কি আদৌ আপনার মাহাত্ম্য জাহির করে?
একান্তই যদি সবাইকে সাথে নিয়ে আগাতে চান তবে তাদের বুঝান ভদ্রভাবে। যদি শুনে তো ভালো, নাহয় ছেড়ে দিন।
সবাইকে যে এস্ট্রোনট বানিয়ে মঙ্গলে পাড়ি জমাতেই হবে, এমনটা ভাবা আসলেই যুক্তিহীন।

নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ঠিকই যখন আপনার দেশকে বৈশ্বিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করছে তবু কেনো আপনি এই দেশকে "ধর্মান্ধের দেশ" বলে ব্লেম দিচ্ছেন ঢালাওভাবে?

... ... ...

এবার আসি কেনো ব্লেম দেয়াটা ভুল।
শুরুতেই বলেছি, কে কতটা সমসাময়িক পরিস্থিতিতে নিজেদের উন্নতি করছে তার জন্য কিছু শর্ত কাজ করে।

দেখেন, পেটে ভাত না থাকলে কেউ ৩০০টাকা দিয়ে নীলক্ষেত থেকে ফিলোসফির বই কিনে পড়তে যাবেনা।

"একটা সম্পূর্ণ জাতি খেয়েদেয়ে ফ্রি টাইম থাকাসত্বেও কেনো সংস্কৃতির চর্চা করবেনা"
- এরকম একটা সিনারিও থেকে যদি আপনি আক্ষেপ দেখিয়ে থাকেন, তবে সেটা নেহাতই মহৎ।
কিন্তু আদৌ এই কন্ডিশন আপনার এই থার্ড কান্ট্রির দেশের সাথে যাচ্ছে কিনা ভেবে দেখবেন।

উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে আফসোস করবেন, কেউ মুক্তোর মর্ম বুঝলোনা! মূর্খ!
তাহলে ভাই বড় মূর্খ তো আপনি।

আগে উলুবনের বাসিন্দাদের মুক্তো কি জিনিস সেটা নিয়ে ব্রিফিং দেন।
তারপর বুঝান এই মুক্তো দিয়ে কি কি করা যেতে পারে।
এবং তখনও যদি তারা মুক্তের দাম না দিতে পারে, তখন মুর্খ/বর্বর বলে গাল দিয়েন।

কিন্তু তার আগে না.
তার আগে আপনার যাবতীয় মহৎ মুক্তোগুলো তাদের কাছে সাংঘর্ষিক লাইন ব্যতিত আর কিছুই মনে হবেনা।
এতে আপনার মুক্তের তাৎপর্য তো ক্ষুন্ন হলোই, সাথে ক্ষুন্ন হলো আপনার জ্ঞানী ভাবগাম্ভীর্য।

... ... ... ...

এবার হয়তো কেউ কেউ বলবেন, "মুক্তাকে চেনাতে যাওয়ার প্রথম ধাপ হলো উলুবনের আবর্জনাকে খারিজ করা। সব উন্নত জাতির ইতিহাসই এমন। তারা উলুবনে মুক্তা চিনিয়েছে দ্বন্দ্বের মাধ্যমে, নিছক প্রদর্শনের মাধ্যমে নয়!"

দেখেন, আপনি দ্বন্দ্বের মাধ্যমে কোনোকিছু স্টাবলিশ করতে চাইছেন। সেটা একান্তই আপনার আইডোলজি।
কিন্তু ভুলেও দাবী করবেন না, দুনিয়ার সকল জ্ঞানমুক্তোর বীজ বপিত হয়েছে দ্বন্দ্বের মাধ্যমে।

যদি জ্ঞানের মুক্তচর্চার সূত্রপাত্রের ইতিহাসেই যাই, দর্শনবিদ্যার মুখপাত্র ৩ দার্শনিক - সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল...

যাদের প্রত্যেকেই নিজেদের বিশ্বাস/জ্ঞানের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তার স্বজাতির সামনে ভদ্রভাবেই প্রদর্শন করে গড়ে তুলেছে। একবারও সেই স্বজাতিকে মূর্খ/বর্বর বলে গাল দিতে যায়নি।
এটাইতো জ্ঞানীর বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।

উলটো সেই স্বজাতির ক্ষোভে প্রাণও দিলো কত জন, তবু বিদ্রোহে না গিয়ে, বিপরীত চিন্তাধারায় না গিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্যে নিজেদের চিন্তা ফুঁটিয়ে তুলেছিলো তারা।
ইতিহাস স্বাক্ষী তাদের রেখে যাওয়া সেই দর্শনের মুক্তো কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই আজ সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত।

মুক্তো চেনাতে গিয়ে বর্বরদের লেভেলে নেমে যাচ্ছেন না তো?
জ্ঞানের মুকুট মাথায় ধারণ করে জ্ঞানীর মত ভেবেচিন্তে আগাচ্ছেন তো?
আমার মত জ্ঞানের বাকি উত্তরসূরীরা আপনাকে দেখে কিছু শিখছে তো?

খামখা বিতর্কিত কথা বলে এদেশে বিরাট অংকের লাইক/কমেন্ট পাওয়া যায়।
জ্ঞানী হওয়া যায়না...

জ্ঞানী মানুষ দ্বন্দ্বের মাধ্যমে মুক্তো চেনাইনি কখনোই।
ভুল ব্যাখ্যা নিজেও ধারণ করবেন না, অন্যের মধ্যেও ছড়াবেন না।
ধন্যবাদ।

চলবে...

Loop (পর্ব-৪)
তারিখঃ ৯১০২/৩০/৭১.