পৃথিবী ও মানুষ - "পর্ব ০১. আমরা কে?"
"এই ইউনিভার্স, সূর্য, পৃথিবী, মানুষ, পশু-পাখি কোত্থেকে এলো? আমি কে? কোথা থেকে এলাম? কিভাবে এ জায়গায় এলাম?"
- মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর মানুষের জানা ছিলোনা, এখনো জানা নেই। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমার আপনার কল্পনাশক্তি বেশ প্রখর। আমাদের বাস্তব ঘাটতি পূরণ করে নেয় কল্পনা। তৈরি করে নিলাম আমরা নানান রকম সৃষ্টিকাহিনি। যেমনঃ সুমেরিয় কাহিনি, আফ্রিকার ডোগান উপজাতির কাহিনি, চীনা সৃষ্টিকাহিনি, হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, ইহুদী-খ্রিস্টান-মুসলিম সৃষ্টিতত্ত্ব, আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি।
এতগুলো সৃষ্টিতত্ত্ব যেমন আছে, আছে সেসবকে কেন্দ্র করে তৈরি বিভিন্ন জটলা। আমি জটলায় যাচ্ছিনা বরং তারচে আপনাদের মজার এক সৃষ্টিতত্ত্ব শুনাইঃ
"আফ্রিকার বান্টু উপজাতির বোশোঙ্গো গোত্রের মানুষেরা বিশ্বাস করতো, শুরুতে ছিল শুধু অন্ধকার, জল আর মহাপ্রভু বুম্বা। একদিন পেটের ব্যথায় থাকতে না পেরে বুম্বা সুর্যবমি করে দিলো। সূর্য কিছু জল শুকিয়ে, শুকনো জমি বের করলো।
বুম্বার তাতেও পেটের ব্যথা কমলোনা। এবার বুম্বা চাঁদবমি করলো, তাঁরাবমি করলো, তারপর কিছু পশু বমি করলো; যেমন চিতাবাঘ, কুমির এবং শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষ। সেই মানুষদের মধ্যে একজন ইয়োকা লিমা ছিলো বুম্বার মত শ্বেতকায়..."
- এমন রয়েছে হাজার হাজার কাহিনি।
তবে আপনি এসব সৃষ্টিকাহিনী পড়ে হাসুন বা ভাবুন বা মারামারি করুন, দিনশেষে চোখ বুজে ঘুমোতে গেলে কপালে কিন্তু আপনারও ঠিকই ভাঁজ দেখা দেয়।
বাসার পাশের ক্লাস ফাইভে পড়া পিচ্চির মত নিজেকেও জিজ্ঞাস করতে বাধ্য হই, "আমরা কে?"
এনাটমিক্যালি বলতে গেলে, পৃথিবীতে বর্তমান মানুষের রাজত্ব শুরু হয় আনুমানিক ২০০হাজার বছর পূর্বে। শুনে মনে হতে পারে, "ভাভাগো, আমরাই তো সত্যিকারের দাবীদার এই দুনিয়ার!" - আসলে কিন্তু তা নয়।
পৃথিবীর নিজের বয়স ৪বিলিয়ন বছর হতে চললো আর এই মহাবিশ্বের বয়স হলো গিয়ে ১৩৮০কোটি বছর। জানি পড়তে গেলে মনে হয় নিতান্তই একটা সংখ্যা এগুলো। কিন্তু আসলেই তার মানেটা কি বৃহৎ তা বুঝাই একটু...
এই ১৩৮০ কোটি বছরকে ১টি বছরে ঢেলে সাজিয়ে ৩৬৫ দিনের সাথে তুলনা করে, ঘটনাগুলিকে সাজিয়ে নিলে কেমন হয় দেখিঃ
আশা করি মোটামুটি একটা ধারণা হলেও দিতে পেরেছি আমরা এই বিশাল মহাবিশ্বের ঠিক কতটুকু সময়ের বাসিন্দা। তারমানে এই না যে, আমরা এই বিরাট সময়ের পথযাত্রায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারিনি!
মোটাদাগে জুম করে নিজেদের দিকে আলোকপাত করি চলুন...
প্রায় ৭০হাজার বছর আগে যখন Homo sapiens রা সংঘবদ্ধভাবে থাকতে শুরু করলো, মূলত সেখান থেকে সৃষ্টি হলো Culture বা কৃষ্টি। আর সেই কালচারের উন্নতির রেশ ধরে বর্তমান অবধি আমাদের চলে আসাটাকেই আমরা History বা আমাদের ইতিহাস হিসেবে জানি।
মোটাদাগে ৩টি রেভ্যুলুশন আমাদের ইতিহাসকে আকৃতি দিয়ে এই পর্যায়ে এনেছে-
ইতিহাস হলো সেই গল্প যা আমাদের অতীত সম্পর্কে আমাদের বুঝতে সাহায্য করে। এই যেমন রোমান সাম্রাজ্য ছিলো ২হাজার বছর আগে, পিরামিড ছিলো তারও আগে, লেখালেখির ইতিহাস চালু হলো ৫ হাজার বছর পূর্বে।
আর সেই লেখালেখির আগের গল্পগুলো হলো Pre-history। আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, লেখালেখি হলো আমাদের ইতিহাসের প্রধান উপকরণ। ইতিহাস একপ্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে যায় লেখার মাধ্যমে বা মুখেমুখে।
যেমনটা লিখেছে আমাদের আদিপুরুষরাও বা তারও আগের আদিপুরুষ...
সেসব লেখা কালের অতলে হারিয়েছে অনেক, খন্ড খন্ড যা কুড়িয়ে পেয়েছি শেষ অবধি ওটুকুই আমাদের একমাত্র অবলম্বন আমাদের নিজেদের সেই প্রাচীন গল্প জানার।
তারমানে এটাও না, যেসব টুকরো লিপি আমাদের হাতে রয়েছে সেসব থেকে সম্পুর্ন গল্প উদ্ধার করতে পেরেছি আমরা। এইতো সেদিনের কথা, দু'হাজার বছর আগের হায়ারোগ্লিফিক যখন আমাদের সামনে এলো বড় বড় চোখ করে সেসবের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিছু করার ছিলোনা। ওসব পশু-পাখি, সূর্য-নক্ষত্রের আকিবুকি টানের রহস্য যেনো আমাদের কাছে চিরদিন অপাঠ্যই থেকে যেতো যদিনা ১৭৯৯ সালে Rosetta Stone টা পাওয়া না যেতো!
পাথরটির উপরের অংশের হায়ারোগ্লিফিকের হুবহু একই অনুবাদ গ্রীকে অনুবাদ করা অবস্থায় আবিষ্কৃত হলো। এবং আমাদের চোখের সামনে হায়ারোগ্লিফিক জগতের দরজাও যেনো উন্মুক্ত হলো।
এতো গেলো হায়ারোগ্লিফিকের গল্প এরকম আরোও অনেক অনেক সভ্যতার লিখিত খন্ড আমাদের হাতে রয়েছে। যেমনঃ সুমেরিয়ান Cuneiform Tablet বা মেসোপটেমিয়ান হরফ বা ভারতের প্রাচীন Padmanabhaswamy Temple এর গুপ্ত চেম্বারের দেয়ালে লেখা অজস্র লেখা ইত্যাদি ইত্যাদি। যার কিছু কিছুর হয়তো অর্থ বের করা গেছে, কিছু কিছুর যায়নি।
কিন্তু যেটুকু রসদ আমাদের সামনে বর্তমান তার পরিব্যপ্তি মোটেও সামান্য নয়। বিজ্ঞানের আশির্বাদে আর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন মানুষের পরিশ্রমে আজ আমরা আমাদের গল্পের অনেকটুকুই জানি। আমরা জানি আমাদের লিখিত ইতিহাসটুকু, আমরা জানি আমাদের লিখিত ইতিহাসের আগের গল্পগুলো।
আর্কিওলজিস্টদের কল্যানে আমাদের শুধু গল্পের ভান্ডারই নয় রয়েছে হাজারো ফসিল আর ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের স্তরে স্তরে সজ্জিত আমার আপনার প্রায় হাজার বছরের গল্প। সেসব গল্প নিয়েই "পৃথিবী ও মানুষ" শিরোনামে পর্বাকারে লিখে রাখবো আমাদের গল্পগুলো। আজকের পর্বে যেমন জানলাম - আমরা কে?
"পৃথিবী ও মানুষ"
- পর্ব ০১. আমরা কে?
লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ
তারিখঃ ৯১০২/৯০/৬২
Source: "Sapiens - A Brief History of Mankind" by Yuval Noah Harari, প্রকৃতি ও মানুষের ক্রমবিকাশ by ডা. জাহিদ মনজুর, Khan Academy, Wikipedia.
(*চলবে...)
- মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর মানুষের জানা ছিলোনা, এখনো জানা নেই। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমার আপনার কল্পনাশক্তি বেশ প্রখর। আমাদের বাস্তব ঘাটতি পূরণ করে নেয় কল্পনা। তৈরি করে নিলাম আমরা নানান রকম সৃষ্টিকাহিনি। যেমনঃ সুমেরিয় কাহিনি, আফ্রিকার ডোগান উপজাতির কাহিনি, চীনা সৃষ্টিকাহিনি, হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, ইহুদী-খ্রিস্টান-মুসলিম সৃষ্টিতত্ত্ব, আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি।
এতগুলো সৃষ্টিতত্ত্ব যেমন আছে, আছে সেসবকে কেন্দ্র করে তৈরি বিভিন্ন জটলা। আমি জটলায় যাচ্ছিনা বরং তারচে আপনাদের মজার এক সৃষ্টিতত্ত্ব শুনাইঃ
"আফ্রিকার বান্টু উপজাতির বোশোঙ্গো গোত্রের মানুষেরা বিশ্বাস করতো, শুরুতে ছিল শুধু অন্ধকার, জল আর মহাপ্রভু বুম্বা। একদিন পেটের ব্যথায় থাকতে না পেরে বুম্বা সুর্যবমি করে দিলো। সূর্য কিছু জল শুকিয়ে, শুকনো জমি বের করলো।
বুম্বার তাতেও পেটের ব্যথা কমলোনা। এবার বুম্বা চাঁদবমি করলো, তাঁরাবমি করলো, তারপর কিছু পশু বমি করলো; যেমন চিতাবাঘ, কুমির এবং শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষ। সেই মানুষদের মধ্যে একজন ইয়োকা লিমা ছিলো বুম্বার মত শ্বেতকায়..."
- এমন রয়েছে হাজার হাজার কাহিনি।
তবে আপনি এসব সৃষ্টিকাহিনী পড়ে হাসুন বা ভাবুন বা মারামারি করুন, দিনশেষে চোখ বুজে ঘুমোতে গেলে কপালে কিন্তু আপনারও ঠিকই ভাঁজ দেখা দেয়।
বাসার পাশের ক্লাস ফাইভে পড়া পিচ্চির মত নিজেকেও জিজ্ঞাস করতে বাধ্য হই, "আমরা কে?"
Egyptian creation myth |
পৃথিবীর নিজের বয়স ৪বিলিয়ন বছর হতে চললো আর এই মহাবিশ্বের বয়স হলো গিয়ে ১৩৮০কোটি বছর। জানি পড়তে গেলে মনে হয় নিতান্তই একটা সংখ্যা এগুলো। কিন্তু আসলেই তার মানেটা কি বৃহৎ তা বুঝাই একটু...
এই ১৩৮০ কোটি বছরকে ১টি বছরে ঢেলে সাজিয়ে ৩৬৫ দিনের সাথে তুলনা করে, ঘটনাগুলিকে সাজিয়ে নিলে কেমন হয় দেখিঃ
- জানুয়ারী'র ০১ তারিখ ভোররাত 12:00:00 AM সময়ে বিগব্যাং এর মাধ্যমে ইউনিভার্সের সূচনা হলো। 12:00:01 AM - এর এই ১ম সেকেন্ডের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের মধ্যেই অনেককিছু হয়ে যায়। যেমনঃ তেজস্ক্রিয় মহাযুগ, প্ল্যাংক পর্ব, জিইউটি পর্ব, ইনফ্লেশন, কোয়ার্ক পর্ব, হ্যাড্রন পর্ব ইত্যাদি কত জটিল পর্বের দক্ষযজ্ঞ ঘটে গেলো মাত্র এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে। এভাবে প্রথম কয়েক মাস কেটে গেলো কণা তৈরি, সেই কণা থেকে বস্তু তৈরি হতে হতে। সরাসরি আমাদের টাইমলাইনে চলে যাই...
- মে'র ০১ তারিখের দিকে তৈরি হলো ২০০কোটি নক্ষত্র(যারমধ্যে আমাদের সূর্য একজন) নিয়ে আমাদের ছায়াপথ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। তখনো কিন্তু সূর্য তার জমিদারী অর্থাৎ সৌরজগৎ শুরু করেনি...
- সেপ্টেম্বরের ০৯ তারিখে উদ্ভব হয় সৌরজগৎ। আর আমাদের এই পৃথিবীর জন্মগ্রহণ সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ...
- সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে প্রাণের উদ্ভব হলো...
- ইউক্যারিয়ট বা আদিপ্রাণের আবির্ভাব হয় নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। আর আদি প্রাণের যে ইতিহাস আমরা জানি, তা প্রায় সবটুকুই ডিসেম্বর মাসের...
- ডিসেম্বরের শুরুটা হয় পৃথিবীর আবহমন্ডলে বাড়তি অক্সিজেন সাথে নিয়ে...
- প্রথম কেঁচোর আবির্ভাব হয় মধ্য ডিসেম্বরে...
- ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে উদ্ভিদেরা পানি ছেড়ে ডাঙায় উঠলো...
- এরপরের কয়টা দিন পৃথিবীতে চললো ডাইনোসরের রাজত্ব...
- বানর ও মানুষের পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা আসলো ২৯শে ডিসেম্বর। আমাদের গল্পের ক্যালেন্ডারের পাতা একেবারে শেষের দিকে চলে আসলেও, এখনো কিন্তু এই ইতিহাসের পাতায় মানুষ অর্থাৎ আমরা পা রাখিনি...
- ৩১শে ডিসেম্বর রাত সাড়ে দশটার আগে আগে দল বেধে আসতে লাগলো Homo ergaster, Homo erectus, Homo neanderthalensis...
- ডিসেম্বরের শেষ সময় অর্থাৎ ১২টা বেজে যাওয়ার ঠিক ৪০ সেকেন্ড আগে আগে Homo sapiens মানে আমরা কৃষিকাজ আবিষ্কার করি...
- রোম সাম্রাজ্যের পতন হয় রাত 11:59:57 PM - এ, অর্থাৎ ১২টা বাজার মাত্র ৩ সেকেন্ড আগে...
- আর আধুনিক কালের ইতিহাস তো মাত্র শেষ ১ সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ব্যাপার...
আশা করি মোটামুটি একটা ধারণা হলেও দিতে পেরেছি আমরা এই বিশাল মহাবিশ্বের ঠিক কতটুকু সময়ের বাসিন্দা। তারমানে এই না যে, আমরা এই বিরাট সময়ের পথযাত্রায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারিনি!
মোটাদাগে জুম করে নিজেদের দিকে আলোকপাত করি চলুন...
প্রায় ৭০হাজার বছর আগে যখন Homo sapiens রা সংঘবদ্ধভাবে থাকতে শুরু করলো, মূলত সেখান থেকে সৃষ্টি হলো Culture বা কৃষ্টি। আর সেই কালচারের উন্নতির রেশ ধরে বর্তমান অবধি আমাদের চলে আসাটাকেই আমরা History বা আমাদের ইতিহাস হিসেবে জানি।
মোটাদাগে ৩টি রেভ্যুলুশন আমাদের ইতিহাসকে আকৃতি দিয়ে এই পর্যায়ে এনেছে-
- বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব, ৭০হাজার বছর আগে যা আমাদের ইতিহাসের সূচনা দিয়েছে
- কৃষিবিপ্লব, ১২হাজার বছর আগে যা আমাদের ইতিহাসকে হামাগুড়ি থেকে দাড় করিয়েছে
- বৈজ্ঞানিক বিপ্লব, মাত্র ৫০০ বছরও হয়নি যার বয়স যা হয়তো আমাদের ইতিহাসের পরিসমাপ্তি টেনে একেবারে নতুন কিছু শুরু করাবে।
ইতিহাস হলো সেই গল্প যা আমাদের অতীত সম্পর্কে আমাদের বুঝতে সাহায্য করে। এই যেমন রোমান সাম্রাজ্য ছিলো ২হাজার বছর আগে, পিরামিড ছিলো তারও আগে, লেখালেখির ইতিহাস চালু হলো ৫ হাজার বছর পূর্বে।
আর সেই লেখালেখির আগের গল্পগুলো হলো Pre-history। আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, লেখালেখি হলো আমাদের ইতিহাসের প্রধান উপকরণ। ইতিহাস একপ্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে যায় লেখার মাধ্যমে বা মুখেমুখে।
যেমনটা লিখেছে আমাদের আদিপুরুষরাও বা তারও আগের আদিপুরুষ...
সেসব লেখা কালের অতলে হারিয়েছে অনেক, খন্ড খন্ড যা কুড়িয়ে পেয়েছি শেষ অবধি ওটুকুই আমাদের একমাত্র অবলম্বন আমাদের নিজেদের সেই প্রাচীন গল্প জানার।
তারমানে এটাও না, যেসব টুকরো লিপি আমাদের হাতে রয়েছে সেসব থেকে সম্পুর্ন গল্প উদ্ধার করতে পেরেছি আমরা। এইতো সেদিনের কথা, দু'হাজার বছর আগের হায়ারোগ্লিফিক যখন আমাদের সামনে এলো বড় বড় চোখ করে সেসবের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কিছু করার ছিলোনা। ওসব পশু-পাখি, সূর্য-নক্ষত্রের আকিবুকি টানের রহস্য যেনো আমাদের কাছে চিরদিন অপাঠ্যই থেকে যেতো যদিনা ১৭৯৯ সালে Rosetta Stone টা পাওয়া না যেতো!
Rosetta Stone |
পাথরটির উপরের অংশের হায়ারোগ্লিফিকের হুবহু একই অনুবাদ গ্রীকে অনুবাদ করা অবস্থায় আবিষ্কৃত হলো। এবং আমাদের চোখের সামনে হায়ারোগ্লিফিক জগতের দরজাও যেনো উন্মুক্ত হলো।
এতো গেলো হায়ারোগ্লিফিকের গল্প এরকম আরোও অনেক অনেক সভ্যতার লিখিত খন্ড আমাদের হাতে রয়েছে। যেমনঃ সুমেরিয়ান Cuneiform Tablet বা মেসোপটেমিয়ান হরফ বা ভারতের প্রাচীন Padmanabhaswamy Temple এর গুপ্ত চেম্বারের দেয়ালে লেখা অজস্র লেখা ইত্যাদি ইত্যাদি। যার কিছু কিছুর হয়তো অর্থ বের করা গেছে, কিছু কিছুর যায়নি।
কিন্তু যেটুকু রসদ আমাদের সামনে বর্তমান তার পরিব্যপ্তি মোটেও সামান্য নয়। বিজ্ঞানের আশির্বাদে আর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন মানুষের পরিশ্রমে আজ আমরা আমাদের গল্পের অনেকটুকুই জানি। আমরা জানি আমাদের লিখিত ইতিহাসটুকু, আমরা জানি আমাদের লিখিত ইতিহাসের আগের গল্পগুলো।
আর্কিওলজিস্টদের কল্যানে আমাদের শুধু গল্পের ভান্ডারই নয় রয়েছে হাজারো ফসিল আর ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের স্তরে স্তরে সজ্জিত আমার আপনার প্রায় হাজার বছরের গল্প। সেসব গল্প নিয়েই "পৃথিবী ও মানুষ" শিরোনামে পর্বাকারে লিখে রাখবো আমাদের গল্পগুলো। আজকের পর্বে যেমন জানলাম - আমরা কে?
... ... ...
"পৃথিবী ও মানুষ"
- পর্ব ০১. আমরা কে?
লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ
তারিখঃ ৯১০২/৯০/৬২
Source: "Sapiens - A Brief History of Mankind" by Yuval Noah Harari, প্রকৃতি ও মানুষের ক্রমবিকাশ by ডা. জাহিদ মনজুর, Khan Academy, Wikipedia.
(*চলবে...)
Post a Comment