-->

ফ্লোরাপাসের এফিটাফ

... ... ... 

ফ্লোরাপাস, গিরিধারা, আ/এ.

যেবার ২য় বারের মত তোমার প্রেমে পড়েছিলাম,
তোমার বাড়ির দক্ষিণ পাশের আমলকী গাছটায় সেবার ১ম ফুল এসেছিলো।
তোমার মনে নেই??
আরে ধুত্তুরি ছাই,
কাকেরদলগুলো এমন মরাকান্না জুড়লো কেনো?
ওরে ও মরামুখোরা,
আজ তোরা অন্য কোথাও সর।
আজ আমার গায়ে পাক্কা ১০২ ডিগ্রী জ্বর!
যা বলছিলাম..
আচ্ছা, তোমার কি মনে পড়ে?
২১৭ রাত্রি জেগে লেখা কবিতার ডায়রি দিয়ে তোমায় প্রেম নিবেদন করেছিলাম.
টানা আধাঘণ্টা খুটিয়ে খুটিয়ে বানান ভুল ধরেছিলে সেদিন!
আড়চোখে চেয়ে বলেছিলে,
- "ফের যদি কবিতায় নীলাঞ্জনার নাম দেখি তো তোমার একদিন কি আমার একদিন!"
খুব বেশি বয়স হয়নি কিন্তু তখন আমাদের,
তবু আবেগের মাত্রাটা ছিলো কত তীব্র।

... ... ...

আজ এ পাড়াতে হয়েছেটা কি বলো তো!
হর্ণ বাজিয়ে পাড়া মাথায় তুলছে কে??
ওরে ও গাড়িওয়ালা,
তুই জাহান্নামে গিয়ে মর।
আর বেশি গাল দিলাম না,
আজ গায়ে ১০২ ডিগ্রী জ্বর!
কোথায় যেনো ছিলাম আমরা?
হু, মনে পড়েছে..
যেবার ৫ম বার তোমার প্রেমে পড়েছিলাম,
সে বছর বাবা আমায় ১টা হারমোনিকা কিনে দিয়েছিলো।
সেটাতো মোটেও বাজাতে পারতাম না,
তবু কত আগ্রহভরে তুমি আমার হারমোনিকা বাজানো শুনতে চাইতে!
সেই হারমোনিকায় আমার ঠোঁট কেঁটে গিয়েছিলো,
তোমার মনে আছে?
তোমার কি মনে আছে?
সেবার প্রথম আমার ওষ্ঠ ছুঁয়েছিলে তুমি..
হ্যাচঁকি তুলতে তুলতে সে রাতে তো আমার গায়ে জ্বরই উঠে গিয়েছিলো!
আর সেটা শুনে বাচ্চা মেয়ের মত ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলে তুমি টানা ৮ মিনিট!
কিন্তু বয়সটাতো আমাদের খুব বেশি ছিলো না,
হয়ত তাই আকাঙ্ক্ষার মাত্রাটা ছিলো প্রবল।

... ... ...

আজ ফ্লোরাপাসের এই রোড ধরে হাটতে এসে আবিষ্কার করলাম,
আমলকী গাছটায় ৯ম বারের মত ফুল ধরেছে।
সেই সাথে বয়স বেড়েছে আমাদেরও।
বদলে নিয়েছি রুটিন।
যেই আমি আগে রোজ একবার করে আসতাম তোমায় দেখতে;
৩৬৫ দিনের চক্রে, আজ সেটা হয়েছে একবার কি দুইবার!
মানুষ তো পরিবর্তনশীল, তাইনা?
সে যাহোক, তুমি কেমন আছো?
শুনেছি তোমার এপিটাফটায় নাকি ঘুণেরা আস্তানা গেড়েছে!
৪ বছর ধরে পঁচতে থাকা তোমার দেহটাকে খেতে খেতে,
আজ ঘুণগুলোও দেখি বেশ মোটা তাজা!
ওরে ও ঘুণের দল,
এবার আমায় তোরা ধর!
আমারো তো রাতে ঘুম পায়,
দেখ, গায়েও ১০৩ ডিগ্রী জ্বর।

... ... ...

তারিখ: ৬১০২/৪০/৬১.
লেখা: রোড নং ছত্রিশ!