লুসিড
... ... ...
(এক্সপেরিমেন্ট -১)
(ঘটনা-১)
ইনফ্রেডিক গান দিয়ে পিমান(ভেড়াসদৃশ এক ধরণের জীব) গুলোকে ফায়ার করলে যে ঘড়ঘড়ে রক্তহীম করা শব্দ হয় অনেকটা তেমন। ভয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।
এমন সময়েই লোকটাকে দেখা গেলো।
মানুষটা ঠোঁটে স্মিতহাসি নিয়ে ছুরিহাতে এগিয়ে আসছে এদিকেই। স্পষ্ট বুঝতে পারছি কি হতে যাচ্ছে। লোকটার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সেও হয়ত এটাই করতো। ১টি খুনের প্রমাণ মুছতে ২য় খুন। বিহ্বল হয়ে পড়ে রইলাম। লোকটা আমার বুকের উপর একহাটু গেড়ে বসেছে...
ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঘুম ভেঙে দেখি ঘড়িতে তখন রাত ২টা ৪০. প্রায় একসপ্তাহ পর, আবারো সেই বিদঘুটে স্বপ্নটা দেখলাম আমি।
বুঝলাম আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো, আমার পরবর্তী মিশন কোথায়। "ওরা" প্রতিটি মিশনের আগে এভাবেই আমাকে স্বপ্ন দেখায়।
ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে এলাম। টেবল থেকে কি-প্যাড নিয়ে লিখতে শুরু করলাম পুরো স্বপ্নের ব্যাপারটা। শেষ করে টেবল-ল্যাম্পটা অফ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে অনেক কাজ বাকি।
যেমন এবার বলেছে, ১টা খুন মুছতে ২য় আরেকটা খুন করতে হবে। কিন্তু বলেনি ওটা ছিলো অপূর্ব সুন্দরী এক তরুণী!
... ... ...
(ঘটনা-২)
- 'বাবা চিনি কতটুকু দিবো?'
- 'আড়াই ক্যাপসুল'
- 'এককাপ কফিতে আড়াই ক্যাপসুল চিনি! এত চিনি খাও কেনো তুমি?'
- 'বুদ্ধিমান মানুষেরা চিনি খায় বেশি'
- 'বুদ্ধিমানরা কখনো নিজেদের বুদ্ধিমান হিসেবে দাবি করেনা'
মধ্যবয়সী এই বুদ্ধিমান লোকটির নাম সাইরুত, আর ১৭ বছর বয়সী ভিভিয়ান তার একমাত্র মেয়ে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তারা "গ্যালাক্টিকো বি১৬" গ্যালাক্সি থেকে বিতাড়িত হয়ে নতুন এই গ্রহে এসেছেন। ফেলে এসেছেন নিজের জীবনের সব স্মৃতি আর সাথে এনেছেন অর্ধাবিষ্কৃত কিছু টার্ম। যা আবিষ্কার হয়ে গেলে রাতারাতি ইতিহাস বদলে ফেলতে হতো সবকিছুর।
- 'বাবা! কে যেনো তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।’
মেয়ের ডাকে বাস্তবে ফিরে এলেন সাইরুত।
... ... ...
(ঘটনা-৩)
আমার কোড নেইমঃ ৭৭৭CS.
তবে সবাই আমায় 'মিমো' বলেই চেনে।
আপাতত শহরের শেষপ্রান্তের ওই হলুদ কিউবটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
স্বপ্নে যেমনটা দেখানো হয়েছিলো।
'সাইরুত' নামের মধ্যবয়সী এক বৃদ্ধ বিজ্ঞানীকে খুন করতে হবে আমায়। খুব সহজ মিশন। তবে "ওরা" যতবারই সহজ মিশন দিয়েছিলো আমায়, ততবারই কিছুনা কিছু গণ্ডগোল করে রেখেছিলো।
যাহোক, আগে বুড়োটাকে মেরে আসি।
... ... ...
(ঘটনা-৪)
মাথার পিছনে ভোতা একটা ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙলো ভিভিয়ানের। আবছা আলোয় তাঁকিয়ে সামনের ছেলেটাকে দেখে অবাক হলো।
- 'আপনি কে?'
- 'মিমো'
- 'আমি এখানে কেনো?'
- 'বাইরের জগতের কাছে আপনি মৃত তাই। আপনার আরোও কিছুক্ষণ ঘুমানো উচিত। ঘুমান।'
কা'ওরা শহর ছেড়ে ওরা এখন প্রায় সতেরশো আলোকবর্ষ দূরে।
গন্তব্য টোফেন শহর। ২২ ঘন্টা যাবৎ ভিএফ৯-এর যান্ত্রিক পিনপিনে আওয়াজ সহ্য করে এরোস্পেস ড্রাইভিং করে মিমোও ক্লান্ত। এদিকে শহরের মাইক্রোওয়েভ চ্যানেলের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে একটুপর পর,
"কোড নং: 508@K
ব্রি সাইরুত.
মার্ডার টাইপ: আননোন.
লোকেশন: কিউব F4, রডোড্রেন্ড, কা'ওরা।
রুল থার্ড ভঙ্গ, জরুরী অবস্থা জারী.
ক্রিমিনাল ওয়ান্টেড!"
মুচকি হেসে শাটলের সামনের দিকে অলস দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো মিমো। তার মিশন আধা কমপ্লিট। ভিভিয়ান নামের মেয়েটা ফের বেঘোরে ঘুমোচ্ছে, ঘুমুক।
রাডার স্কিনে বিপবিপ শব্দে ঘোর কাঁটে মিমোর। টোফেন শহরের সিকিউরিটি সিস্টেম ভেঙে দিয়ে নির্দিষ্ট পোর্টে চুপিসারে ল্যান্ড করালো ভিএফ৯-শাটলটি। মিমোকে এখন শুধু সিকিউরিটি ফোর্স থেকেই লুকোতে হবেনা, লুকিয়ে থাকতে হবে "ওদের" থেকেও!
কারণ, মিশনুযায়ী ব্রি সাইরুতের সাথে সাথে তার মেয়ে ভিভিয়ানকে খুন করা কথা থাকলেও মিমো তা করেনি..
করতে পারেনি!
… … …
এদিকে "ওরা" সবই দেখছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, "ওরা" জানে কি করা হচ্ছে। এবং “ওরা” টের পাচ্ছে ধীরে ধীরে তাদের হিটম্যান তথা মিমো চরিত্রটিতে ঘাপলা দেখা দিচ্ছে। সিস্টেম রিবুট দিতে হবে।
... ... ... ...
(এক্সপেরিমেন্ট ২)
(ঘটনা-১)
লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠলো মিমো।
মাথাটা কেমন যেনো ফাঁকাফাঁকা লাগছে। প্রায় কয়েকসপ্তাহ পর আবারো সেই স্বপ্ন দেখলো সে। "ওরা" তাকে আরেকটি মিশন দিয়েছে।
ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে, স্বপ্নের খুঁটিনাটি সব নোট করে ফেললো।
তবে একবারোও জানতেও পারলোনা সে যে, তার মেমোরি রিসেট করে আগের সব ডাটা মুছে দেয়া হয়েছে। জানতেও পারলোনা, ভিভিয়ান নামের একটা মেয়ে এসেছিলো তার জীবনে।
... ... ...
(ঘটনা-২)
আমার কোড নেইমঃ ৭৭৭CS.
তবে সবাই আমাকে মিমো নামেই চেনে। ঘড়িতে প্রায় সকাল ১১টা. এবার আমাকে পাঠানো হয়েছে মিল্কিওয়ের সেন্টারের দিকে। পৃথিবী নামক গ্রহটার একটা শহরের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। প্ল্যানমাফিক ভাবে সব গুছিয়ে কাজ শেষ করে এলাম। সবমিলিয়ে সময় লাগলো ১৫মিনিট।
তবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবসময় আমাকেই কেনো এই বাজেভাবে খুনগুলো করতে হয়?
... ... ...
এসব ভাবতে গিয়ে মিমো খেয়ালই করলো না, কখন পিছে থেকে এক নিরাপত্তারক্ষী এসে ফায়ার করেছে। ঠিকমত বুঝে উঠার আগেই, মিমো পরে গেলো নিচে।
কেবল যে ব্যাপারটা উল্লেখের বাইরে থেকে যাচ্ছে তা হলো, "ওরা"। ’ওরা’ বুঝছেনা, এক্সপেরিমেন্ট আবার গোড়া থেকে শুরু করবে কিনা।
... ... ... ...
(এক্সপেরিমেন্ট ৩)
(ঘটনা-১)
সময়টা ভোর সাড়ে ৪টা।
সাইন্স এন্ড নেনোট্যাকনোলজির হেডকোয়ার্টারে বসে ক্লান্তিতে ঝিমুচ্ছে স্পন্দন ওরফে ড. হার্শ। ডাটাবেজ এন্ট্রি দেয়া হয়ে গেছে, সিস্টেম রান হতে আর অল্প কিছু স্টেপ বাকি। যদি আজ তার রেজাল্ট পজিটিভ হয়, তবে আবিষ্কারটা হবে মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ এক অধ্যায়ের সূচনা!
তিনি অমর হওয়ার এন্টিটোড প্রায় মিলিয়ে ফেলেছেন বলতে গেলে। এখন কন্ট্রোল প্যানেলের ঝিমঝিম শব্দ ছাড়া পুরো ল্যাব একদম নীরব।
ঠিক তখনই ঘটনাগুলো একসাথে ঘটে গেলো! একদলা আলোর তীব্র ঝলকানি আর সাথে প্রচণ্ড ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠে পুরো ল্যাবরেটরি।
সাইরুতের মতই ড. স্পন্দনও এক্সপেরিমেন্টটি অসমাপ্ত অবস্থায় শিকার হলেন "ওদের" পাঠানো নতুন হিটম্যান "৭৭৭CT" এর হাতে।
নতুন হিটম্যানের এখনো নাম ঠিক করা হয়নি।
... ... ...
(ঘটনা-২)
ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লের চারিদিক চুপচাপ।
"ওরা", খুব যত্নের সাথে সিকোয়েন্স মিলিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছিলো হোমো সেপিয়েন্স দের।
কিন্তু বাগড়া দিয়ে বসলো এই এন্টিটোডটা। এটা তৈরি করে ফেলার কাছাকাছি চলে যাবে মানুষগুলো তা ভাবতেও পারেনি কখনো " ওরা"।
"ওরা" বিভিন্ন সময়ে ফিরে গিয়ে বারবার হত্যা করে এসেছে। তবুও কিছু জিনিসের নিয়ন্ত্রণ "ওদের" হাতেও নেই।
ড. হার্শ অথবা স্পন্দন অথবা ব্রি সাইরুত,
একই মানুষগুলোকে কয়েকবার টাইম ক্র্যাক করে চালান করিয়েও বদলানো যাচ্ছেনা ইতিহাস। পারছেনা ওই নির্দিষ্ট "এক্সপেরিমেন্ট" ভুলিয়ে দিতে...
এদিকে "৭৭৭C" সিরিজের হিটম্যানগুলো এতদিন বাধ্য পুতুলের মত কাজ করে গেলেও এখন ঝামেলা করছে। লজিক ফাংশনের কিছু ছোটখাটো ডাটা এন্ট্রি করা মানুষগুলোর কত আবেগ! আচ্ছা, এই আবেগ কন্ট্রোলের ইকোয়েশনটা কোথায়? এটাকেই অকেজো করতে হবে। যদি আবেগই না থাকে, তখন হয়ত অনেকগুলো সমস্যা মিটে যাবে।
আবেগবর্জিত মানুষগুলো হবে কন্ট্রোল প্যানেলের কিছু দাস।
... ... ... ...
"এক্সপেরিমেন্ট-৪" শিরোনামে নতুন প্রজেক্ট শুরু হয়ে গেলো।
অনেকদিন পর "ওরা" ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তবে এবার আর টাইম ক্র্যাক করা নয়, এবার ওরা নতুন ইকোয়েশন বের করতে ব্যস্ত। যে ইকোয়েশন দিয়ে তারা মানুষের আবেগটাই উঠিয়ে দিবে।
তৈরি করবে নতুন করে মানবজাতির ইতিহাস। কোথায় যেনো শুনেছিলাম,"প্রিয়জন চলে গেলে মানুষ ব্যথিত হয়,
আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনো নয়।
তোমরা মানুষ তাই সহজেই দুঃখ পাও,
হে ঈশ্বর, আমাকে আকাশ করে দাও."
... ... ...
তারিখ: ৫১০২/২১/৮১.
লেখা: রোড নং ছত্রিশ.
Post a Comment