-->

স্বচ্ছ সিরিজের - রৌদ্রস্নাত নীল গোলাপ

সৌন্দর্য কি কেবলি যৌনকামনার মাপকাঠি?

উহহু, কখনোই না..
একটা মেয়ে যখন তার ১৮তম বসন্ত ছুঁয়ে ফেলে, তখন সবার আগে যে জিনিসটা কাজ করে তা হলো, ম্যাচিউরিটি বা নিজস্বতাবোধ."
"বলা হয়ে থেকে সুইট সিক্সটিন এক ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য।
যদি কেউ তা সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারে, তবে সে ভাগ্যবান."
আর এখন যদি একটি ষোড়শী আর অষ্টাদশী মেয়ের মাঝে তুলনা করতে বলি?
আপনি কাকে রেখে কাকে ভোট দিবেন??
ব্যাপারটা আসলেই খুব জটিল।
দুজনেই নিজস্ব ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র!
সে যাহোক, আপাতত আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি অফহোয়াইট রঙের ১টা বিল্ডিং এর নিচে।

গেইটের দাড়োয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে। আর হাতে শেকলে বাঁধা জাঁদরেল কুকুর।
দোতলার বারান্দায় রেবা মিটিমিটি চোখে চেয়ে আছে।
আচ্ছা, একটা জিনিস খেয়াল করলাম।
আজকালকার দাড়োয়ানগুলো এমন রোগা পটকা হয় কেনো? খাকি রঙের ঢোলা ড্রেসে একেকটাকে উদ্ভট সঙের মত লাগে।
এই দাড়োয়ানটাও তেমন।
আমি যে এগিয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে তার সাথে একটু আলাপ করবো সে পরিস্থিতি নেই।
যেকোনো মূহুর্তে শেকল ছেড়ে দেয়া হতে পারে.
আর আমি কুকুর ভীষণ ভয় পাই!
... ... ...

রেবার সাথে প্রথম যেবার দেখা হয়েছিলো সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম চকবাজার, গুলজার টাওয়ারের নিচে।
দুপুর বারোটার কড়া রোদ, গাড়ির ধোয়া আর রিকশার ক্রিংক্রিং বেল...অদ্ভুত এক মাদকতার সৃষ্টি করেছে।
আমিও সেই নেশায় বুদ হয়ে হালকা হালকা ঢুলছি।

- 'আপনার কি হইছে?'
মেয়েলি কণ্ঠে নেশা টুটে গেলো আমার।
চোখ খুলে দেখি সামনে নীল ইউনিফর্ম, মাথায় সাদা স্কার্ট, চোখে চশমা আর মুখঢাকা কালো মাস্ক.
নিচে তাঁকিয়ে দেখি পায়ে সাদা কেডস।
এই ফর্মাল ড্রেসের মেয়েটার সাথে আমার কিসের লেনদেন হতে পারে সেটা পরে চিন্তা করা যাবে, আপাতত পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি।
- 'আমায় বলছেন?'
- 'আপনার কি হইছে? এভাবে ঢুলছেন কেনো? আপনি কি অসুস্থ? '
- 'কই নাতো!'
- 'দূর থেকে আপনাকে দেখে আমার মনে হয়েছিলো আপনি টলছেন,,,যেকোনো সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন!'

মেয়েটার কথা বলার মাঝে একটা আলাদা টোন আছে।
কড়া রোদেও স্নিগ্ধ একটা আভা আচ্ছন্ন করে রাখছে এমন।
আমি চুপ করে রইলাম...কিছু বলে, তার কথা বলায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনা।
আর মেয়েটাও একনাগাড়ে বকে চলেছে।
যেনো আমি তার স্কুলপালানো পুরানো বন্ধু, অনেকদিন বাদে দেখা হলো আমাদের।
তারপর, হুট করে যেমন কথা বলা শুরু করেছিলো তেমন হুট করেই কথা থামিয়ে চলে গেলো।
- 'আচ্ছা, আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। যেতে হবে...বাই'
আমিও চুপচাপ আগের মতই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ঢুলছি।
যোহরের আজানের অপেক্ষায় আছি।
এতক্ষণে মনে পড়লো, মেয়েটার পরিচয় জানা হয়নি।
তাতে অসুবিধে নেই, জানি আবার দেখা হয়ে যাবে।

... ... ...

পরেরবার দেখা হয়েছিলো যখন, তখন ছিলো শীত।
বঙ্গদেশীয় জলবায়ু ৬ ঋতুর জায়গায় সংক্ষিপ্ত হয়ে ৩ ঋতুতে এসে ঠেকেছে।
চাদর জড়িয়ে হাটছিলাম এক আবাসিক এলাকার রাস্তায়।
মজার ব্যাপার, হালকা হালকা বৃষ্টিও হচ্ছে।
বর্তমানের ট্রেডিশন অনুযায়ী বৃষ্টিতে রাস্তায় ছাতা ছাড়া হাটে দুই প্রকৃতির ছেলেমেয়ে।
একদল হলো আমার মত, যাদের সত্যিই ছাতা থাকেনা। এরা না চাইলেও ভিজতে থাকে।
আর একদলের কাছে ছাতা আছে, তবু তাঁরা অন্যদের নিকট নিজেদের আলাদা দেখানোর জন্য বৃষ্টিতে কাকভেজা ভিজবে।
এদের বেশিরভাগই, স্কুল/কলেজপড়ুয়া, যারা একটুপর পর চেঁচিয়ে উঠবে,
"ওএমজি!! কত্ত কিউত পরিবেশ!"

আশেপাশের মানুষ এদের দেখবে, কতিপয় বখাটে ওদের ভেজা শরীরের ভাঁজে চোখ বোলাবে আর বাকিরা নিষ্ক্রিয় ভাবে পাশ কাঁটিয়ে যাবে।
এসব ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ আর বাদবাকি মহাজাগতিক সব চিন্তা করতে করতে এতই মগ্নভাবে হাটছিলাম, খেয়ালই করিনি আমার মাথার উপর কেউ একজন ছাতা ধরে আছে।
পরিচিত সেই কিন্নরকণ্ঠ,

- 'আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন কেনো?'
- 'কই নাতো!'
- 'বললেই হলো! আমি দেখছিতো...তাইতো ছাতা ধরলাম'
- 'মা জননীর অশেষ কৃপা'
- 'হোয়াট!! মানে কি?'
- 'What মানে তো 'কি'ই হয়'
- 'হিহিহি...আচ্ছা বুঝলাম'

তাঁকালাম মেয়েটার দিকে।
সুন্দর মুখশ্রী, টানাকাঁজল দেয়া চোখে মাদকতা আছে, কথা বলার সময় ভ্রু নাচায় খুব।
এই মেয়েটাকে কি আমি চিনি??
যেনো আমার প্রশ্নটাই প্রতিধ্বনিত করলো মেয়েটা,

- 'আপনি আমায় চিনেছেন তো?'
- 'উহু'
- 'উহু কি!'
- 'আপনাকে চিনছিনা, তবে খুব জলদিই চিনে ফেলবো আশা করি'
- 'না চিনেই বিগত ১৫মিনিট অচেনা এক মেয়ের ছাতার নিচে একসাথে হাটলেন?'

ফের ভ্রু নাঁচিয়ে প্রশ্ন করলো...
উহহু, এই মেয়ে আমার পরিচিতা নয়। নাহয়, এই ভ্রু নাঁচানো ব্যাপারটা নতুন লাগতো না!
- 'আপনি কি সত্যিই আমায় চিনতে পারেন নি?'
- 'দুঃখিত.. আমি চেষ্টা করছি চিনে ফেলার জন্য, পারবো বলে মনে হচ্ছেনা'
- 'ভারী অদ্ভুত তো! আপনি কি এমন অপরিচিত মানুষের ছাতার নিচে হাটতে অভ্যস্থ?'
- 'উহু'
- 'উহু টা কি আবার?'
- 'অর্থাৎ, আমি অভ্যস্থ নই'
- 'আচ্ছা...(একটু মন খারাপ করে)....আমার নাম রেবা। গত বছর, আমার S.S.C পরীক্ষার সময় চকবাজার, গুলজারের নিচে আমাদের দেখা হয়েছিলো। আপনি বিকারগ্রস্তের মত ঢুলছিলেন দেখে আমি দৌড়ে গিয়েছিলাম আপনাকে ধরতে। আপনার কি কিছু মনে পড়েছে?'
- '...উহু'

এবার রেবা সত্যিই রেগে গেলো।
ছাতা সরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ অগ্নিদৃষ্টিতে আমায় ভস্ম করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে, উলটো ঘুরে গটগট করে হেটে চলে গেলো।
ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
আমি কাকজনতার মত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগলাম হাপুস হয়ে।
এতক্ষণে মনে পড়লো, ওইদিনে দুপুরের মুখে মাস্ক লাগানো সেই স্নিগ্ধকন্ঠী মেয়েটার নাম রেবা।

... ... ...

শুনেছি আমাদের আদি পূর্বপুরুষ বানরগোত্রীয় ছিলো।
যদি তাই হয়, তবে একদা আমাদের পুচ্ছদেশে ছিলো লেজ।
সেই লেজ যদি কালের বিবর্তনে হারিয়ে না যেতো, তবে আজকালকার রুচিশীল ফ্যাশনদুরস্তরা কি টাইপ পোষাক পরতো?
সেই লেজ কেউ কেউ পুরোটা লুকিয়ে হাটতো,
কেউ কেউ অর্ধেক বের করে হাটতো,
কেউ কেউ লেজের পশমে স্পাইক করতো হার্ড জেল লাগিয়ে,
বখাটেরা ওড়নার বদলে পিছ থেকে লেজ ধরে টান দিতো,
আর কবি হয়ত গানের কথাটা পালটিয়ে গাইতো,
"বিনোদ লেজের জরীন ফিতায়,
আলগা ইশক মেরা কাচ গেয়ি,
দিল ওহি মেরা ফাস গেয়ি.."
এই উদ্ভট চিন্তা করতে আমার এতটুকুও বেগ পেতে হয়না।
কেননা, অদৃশ্য হলেও আমাদের অনেকেই পেছনে লেজ নিয়ে ঘুরে।
এই মানুষগুলো নিজেদের লেজ নিজেরাই মাড়ায়, নিজেরা চেঁচিয়ে অন্যদের কান ফাটায়।
তেমন হলেন আমার সামনে বসা ভার্সিটির মেয়েটি।
টেম্পুতে উঠার সময় দেড় ইঞ্চি সরু জুতার হিল দিয়ে আমার পা গুড়িয়ে দিয়ে, উলটো আমার উপর চোটপাট দেখাচ্ছে, এদিকে আমার পা থেকে রক্ত বেরোনো শুরু হয়েছে।
রাস্তায় নেমে টের পেলাম, পায়ের অবস্থা কত শোচনীয়!
হাটছিলাম খুঁড়িয়ে।

উদ্দেশ্য অনেকদূর, খুলশি আবাসিক।
রাস্তায় ফেব্রুয়ারির আভাস।
ফেব্রুয়ারি হচ্ছে, "ভ"-এর মাস...
'ভ'-তে = ভাষা,
'ভ'-তে = ভালোবাসা.

খুব অদ্ভুত সুন্দর জাতি আমরা।
একদল '৫২ তে ঘটা ব্যাপার নিয়ে হিন্দিতে পাকিস্তানীদের গালাগাল দিচ্ছে জোরছে,
অন্যদল পার্কে বসে একটা হেডফোন দুজন ভাগ করে ইংলিশ রোমান্টিক গান শুনছে।
শুনেছি,
"ভাষা নদীর মত বহমান। নদীর যেমন চলার পথের বাঁকে বাঁকে দিক পরিবর্তন করে, আর এতেই নদীর সৌন্দর্য। তেমনি ভাষাও কালের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়ে, শ্রুতিমধুর হবে".
বঙ্গদেশীয় ভাষার নদীতে জোয়ার চলছে।
দারুন দারুন "অসাম শব্দ" আমাদের অভিধানে যুক্ত হচ্ছে, আর নীরবে তাদের জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে অভিধানের পুরাতন গুরুগম্ভীর বাসিন্দারা..

সকালবেলা ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করি টেবিলের উপর দুইটা খাম।
একটা গাড় আকাশী, আরেকটা হালকা নীল।
শার্লক হোমসের মত খানিকক্ষণ চেষ্টা করলাম, খাম না খুলে ভিতরের কাগজের পাঠোদ্ধার করতে। কিন্তু আমি শার্লক হোমস নই!
হালকা নীল খামটা তিথীর।
ওটা খুললাম না...
গাড় আকাশী খামটা খুলে দেখি ভিতরে কিছুই নেই, ফাঁকা খাম।
খামের গায়েও কিছু লেখা নেই। বুঝলাম না, সকালবেলা এমন কে আমার সাথে মজা করতে চাইবে।
মেসবয় গুড্ডুকে ডাক দিলাম।
সে জানালো, দুটো চিঠিই একজন মেয়ে এসে দিয়ে গিয়েছিলো। গুড্ডুকে ১০০টাকা বখশিশও দিয়ে গেছে।

গুড্ডুকে ডেকেছিলাম চিঠির রহস্য উদঘাটন করতে, উলটো ও আরোও বেশি জট পাঁকিয়ে দিয়ে গেলো।
যাহোক, রহস্য যত বেশি জট খায় তত সহজেই খুলে যায়।
হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তখনই।
আবাসিক এলাকার নির্দিষ্ট বাড়িটার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে বাড়িটার আর্কিটেকচিং দেখছিলাম।
ক্যালেন্ডারের ছবির মত বাংলো টাইপের বাড়িটার ঝুলবারান্দায় অনেকগুলো নীলগোলাপ আছে।
আমার ১টা দরকার..
কিন্তু বাড়ির ভেতরে আমি যেতে পারবো না।
দাড়োয়ান ব্যাটা আমাকে চিনে, আগেরদিন তাকে বাড়ির মালিকের নিকট বকা শুনিয়েছিলাম খুব।

আমি জানতাম না এটা রেবাদের বাড়ি।
হাটতে হাটতে হুট করে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। বলা যায়, মুগ্ধ হয়ে যাই এত সুন্দর ডিজাইন দেখে।
বাড়ির ভেতরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছা করে খুব।
দাড়োয়ান ব্যাটাকে বলেছিলাম আমি তার মালিকের বড় ভাইয়ের ছেলে। দাড়োয়ান বাড়ির ভিতরে ইন্টারকমে কল দিয়ে নিশ্চিত হয়ে আমায় ভিতরে যেতে দেয়।
তখনো বুঝিনি, সেই কলটা রেবা রিসিভ করে। রেবাই দাড়োয়ানকে বলে আমায় না আঁটকাতে।

আমি বাড়ির ভিতরে ঘুরাঘুরি করি।
একটা টব উল্টিয়ে ভাঙি, লনের ঘাস দুমড়িয়ে দেই আর কাঁচের পুরুত্ব পরীক্ষা করতে গিয়ে পাথর ছুড়ে ভাঙি বাড়ির পেছনের ১টা জানালা।
তারপর চুপচাপ আবার বেড়িয়ে যাই...
একটু পরেই রেবা ঝুলবারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
মিটিমিটি চোখে হাসে আমাকে দেখে। ইশারায় নিচে আসতে বললে মেয়েটা আরো গা দুলিয়ে হাসতে থাকে।
কারণ, বুঝতে দেরী হয় আমার।
দেখি, দাড়োয়ানের হাতে বাঁধা জাদরেল কুকুর।যেকোন মূহুর্তে রোগা দাড়োয়ান কুকুরটা ছেড়ে দিতে পারে।
আর আমি কুকুর ভয় পাই!

... ... ....

তিথীর নীল খামটা পকেটে নিয়েই ঘুরছি।
খুলতে ইচ্ছা করছেনা..
পাশে রেবা নামের এক মেয়ে আছে বলে?
উহু, আমি জানি তিথী কি লিখেছে চিঠিটায়।
আর যা জেনে যাই, সে জিনিসে মানুষের আগ্রহ থাকেনা।
ওই সময়ে দাড়োয়ান কুকুরটা ছেড়ে দিয়েছিলো কিনা,
বা আমি কুকুরের তাড়া খেয়েছিলাম কিনা সেটা নাই বা বললাম।
তবে রেবা মেয়েটা একতোড়া নীল গোলাপ হাতে করে সেই দুপুর থেকে কড়া রোদে হাটছে।
মেয়েটাকে বলেছিলাম ১টা গোলাপ দিতে, মেয়েটা নিজেই চলে এসেছে।

আমার গায়ে হালকা নীল পাঞ্জাবী।
তিথীই গিফট করেছিলো এটা, খুব সম্ভবত গত বছরের কথা।
একবারো গায়ে দেইনি কখনো।
এবছর দেখি একটু ছোট হয়ে গিয়েছে লম্বায়...
- 'আমরা কোথায় যাচ্ছি?'
- 'কই নাতো! আমি কোথাও যাচ্ছিনা, তবে আপনি আমার সাথে হাটছেন'
- 'আপনি সব উত্তর এমন পেঁচিয়ে দেন কেনো?'
- '...আচ্ছা আর প্যাঁচাবো না'
- 'তিথী আপু কেমন আছেন?'
- 'তিথী কে?'
- 'হিহিহি...যেনো আমি কিচ্ছুটি জানিনা তাইনা?...'
- 'হু'
- 'কি হু? বলুন না, তিথী আপুর সাথে আজ আমায় দেখা করিয়ে দিবেন?'
- 'আমি ওদের বাসার ঠিকানা ভুলে গিয়েছি'
- 'আপনি বড্ড বেশি মিথ্যুক...আমি ঠিকানা জানি চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি'

রেবা রিক্সা ঠিক করলো ১টা।
চুপচাপ তার সাথে উঠে বসলাম।
তিথীকে অনেকদিন দেখিনি..
রেবা জানেনা, আমি সত্যিই তিথীদের বাসার ঠিকানা ভুলে গিয়েছি!

সেই দোতলা বাড়িটার সামনের রাস্তায় গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
রেবা গিয়েছে বাড়ির ভিতরে, তিথীর খোঁজ নিতে।
পকেট থেকে খামটা বের করলাম।
আমি এখন জানি গাড় আকাশী ফাঁকা খামটা রেবার।
হালকা নীল খামটা হাতে নিলেই পড়ার ইচ্ছা হারিয়ে যাচ্ছে..

আচ্ছা, তিথী কেমন আছে?
উত্তরটা কি রেবা আনতে পারবে?
উত্তরটা আমারো দরকার..
রোদের তেজ কমেছে।
খানিক বাদেই মধ্যাহ্ন আর দ্বি-প্রহরের মাঝামাঝি সময়টা আসবে।
সূর্য থাকবে মাথার উপর থেকে হালকা পশ্চিমে হেলানো।

কোথায় যেনো শুনেছি এই সময়ে ফাঁকা রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্যান্ট-স্যুট-হ্যাট-গ্লাভস পরা কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে।
যাদের সমস্ত শরীর রোদের আড়ালে থাকলেও পা থাকে খালি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে অদ্ভুত "হুমহুম" শব্দ করে।
শুনেছি এরা নাকি রোদ সহ্য করতে পারেনা।
কারণ, রোদে এদের ছায়া পড়েনা!
আমি এদের নাম দিয়েছি, "হু-মানুষ".
কখনো এদের দেখিনি।
আজ খুঁজে দেখব প্রতিটা রাস্তার মোড়।
কারণ, আজ তিথী আসবেনা...

কখন পাশে এসে রেবা দাড়িয়েছে খেয়ালই করিনি,
- 'আপনার কি হয়েছে? আপনি টলছেন কেনো?'
- 'কই নাতো'
- 'আপনি কি অসুস্থ?'
- 'উহু'
- 'উহু কি?'
- 'আমি অসুস্থ না। তিথী কেমন আছে?'
- '...তিথীরা এই বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। নতুন বাড়ির ঠিকানা এরা জানেনা। আপনি চিন্তা করবেন না, আমি খুঁজে বের করবো!'
- 'হু'

হাটতে শুরু করলাম।
অদ্ভুতভাবে খেয়াল করলাম, রেবার ছায়া পড়ছেনা।
তাঁকালাম ওর দিকে..
সুন্দর মুখশ্রী, টানাকাঁজল দেয়া চোখ, চোখের ভ্রু তে রাজ্যের মায়া!
রেবা কি "হু-মানুষ"?
তা কি করে হয়...মাথাটা দপদপ করছে ব্যাথায়।
আমায় মেসে ফিরতে হবে।

- 'স্বচ্ছ..'
- 'হু'
- 'আমি যদি আপাতত অল্প কিছুক্ষণের জন্য আপনার হাত ধরে হাটি আপনি কি খুব রাগ করবেন?'
- 'উহু'
- 'উহু কি?'
- 'আমি খারাপ। খারাপ এক অতিপুরুষ। আর অতিপুরুষরা কারোও হাত ধরে হাটতে পারেনা।'

খুব জলদি হাটতে হবে।
ভয়ঙ্কর মাথা ব্যাথাটা আমায় পুরোপুরি কাবু করার আগেই।
তিথীকে নীল গোলাপটা দেয়া হলোনা তাহলে।
তিথী, ভালো থেকো।

... ... ...

তারিখ: ৫১/২০/৬১০২
লেখা: রোড নং ছত্রিশ.