পৃথিবী ও মানুষ - "পর্ব ০২. কৃষিবিপ্লব কি মানবজাতির অভিশাপ?"
"কে সেই জমিদার যে প্রথম পৃথিবীর বুকে কল্পিত সীমানা টেনে দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতন কিছু জমিন নিজের বলে দাবী করেছিলো? সেটাই কি তবে পৃথিবীর ইতিহাসে, মানুষ হিসেবে প্রকৃতির উপর খাটানো সবচেয়ে বড় দাবী? মানুষই কি প্রথম প্রাণী যে কিনা সীমানা দিয়ে জমিন ভাগ করা শুরু করেছিলো?"
- প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমাদের কখনোই হয়তো জানা হবেনা, কেননা সবকিছু যে ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই।
তবে একথা সত্য যে, এই জমিন ভাগ করাটা ছিলো মানুষ হিসেবে আমাদের বেড়ে ওঠার এক অবিচ্ছেদ্য গল্প। চলুন আজ সেই গল্প শুনি...
প্রায় ১২হাজার বছর পুর্বে মানুষ শিকার এবং ফলকুড়ানো জীবন রেখে কৃষিতে মনোযোগ দেয়, যার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা পেয়েছি বিদ্যুৎ, ইঞ্জিন, কম্পিউটার, রকেট, নেটফ্লিক্স, এবং কাচ্চি বিরানি।
কাচ্চি বিরানির কথাই ধরা যাক, এই বিরানিতে রয়েছে প্রায় ৪৭০ক্যালরি। আর এই বিরানির জন্য আমাদের দরকার হয় খাসির মাংস, পোলাও চাল, মসল্লা, তেল আরোও অনেক কিছুই। যেকোনো 'সুপারশপ' থেকে সহজেই সবকিছু আমরা চাইলেই 'অর্থের' বিনিময়ে খরিদ করতে পারি। কিন্তু শুরুর দিকে তা এতটা সহজ ছিলোনা!
আর্কিওলজি আর পেলেওবায়োলজির কাঁধে চড়ে আমাদের তা জানার জন্য যেতে হবে অনেকটা পেছনে...
যেতে হবে ১৫হাজার বছর পুর্বে, যখন মানুষকে আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য শিকার খুঁজতে হতো। অন্য সব প্রাণির মত দৈহিকভাবে শক্তিশালী না হওয়ার কারণে আমাদের শিকারী জীবনটা বেশ কষ্ট আর সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পাড় হয়েছে। প্রতিটি কষ্টের ছাপ রয়েছে আমাদের ডিএনএ তে, ছাপ রয়েছে আমাদের দৈহিক আকৃতিতে এবং মস্তিষ্কে।
দৈহিক হিসেবে মানুষ হয়ে ওঠার গল্পটা নাহয় আরেকদিন করবো।
তো যেখানে ছিলাম আমরা, শিকারী জীবন। হ্যা, সেই শিকারী জীবনে আমাদের সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে সহজ শিকার ছিলো মাছ। আর এজন্যই সেসময়ের সবগুলো বসতি/সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো নদী/জলের তীরে। জলের কাছাকাছি থাকাটা আরোও কয়েকটি দিক থেকে লাভবান ছিলোঃ
এবং যেহেতু তাদের একবেলা শিকার করেই দুইবেলা চলে যেতো, সুতরাং তাঁরা প্রচুর অবসর সময় হাতে পেয়েছিলো নিজেদের দিকে নজর দেয়ার। এবং ইতিহাস বলে, শিকারী এই মানুষদের অবসর কেটেছে বেশ সৌখিন ভাবেইঃ
অর্থাৎ মোদ্দাকথা এইযে, কৃষিবিপ্লব মানুষের ইতিহাসের পাতায় এনে দিয়েছিলো বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছিলো যাবতীয় মানবিক আবেগ।
একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, তৎকালীন যুগের এই কৃষিবিপ্লব কিন্তু হুট করে কোনো বিশাল ঘটনার মত সমগ্র পৃথিবীতে একইতালে সংঘটিত হয়নি। বরং আমরা যদি ১৩,০০০-৮০০০ BC এর দিকে লক্ষ করি তবে দেখতে পাই, সমগ্র ব্যাপারটি সারা পৃথিবীতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে গড়ে উঠেছে। যেখানে যে ফসল ভালো জন্মাতো সেখানে সেই ফসলই প্রাধান্য পেয়েছিলো এবং সেই ফসলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠতো সেখানকার কালচার/সভ্যতা। যেমনঃ
যাহোক, ফিরে আসা যাক প্রসঙ্গে, কেনোই বা হুট করে আমরা শিকারী দলবদ্ধ জীবন ছেড়ে দিয়ে কৃষিতে মনোযোগী হলাম? এর উত্তর দিতে গেলে আমাদের আশ্রয় নিতে হবে কল্পনার।
- প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমাদের কখনোই হয়তো জানা হবেনা, কেননা সবকিছু যে ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই।
তবে একথা সত্য যে, এই জমিন ভাগ করাটা ছিলো মানুষ হিসেবে আমাদের বেড়ে ওঠার এক অবিচ্ছেদ্য গল্প। চলুন আজ সেই গল্প শুনি...
Ploughing with a yoke of horned cattle in Ancient Egypt. Painting from the burial chamber of Sennedjem, c. 1200 BC |
প্রায় ১২হাজার বছর পুর্বে মানুষ শিকার এবং ফলকুড়ানো জীবন রেখে কৃষিতে মনোযোগ দেয়, যার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা পেয়েছি বিদ্যুৎ, ইঞ্জিন, কম্পিউটার, রকেট, নেটফ্লিক্স, এবং কাচ্চি বিরানি।
কাচ্চি বিরানির কথাই ধরা যাক, এই বিরানিতে রয়েছে প্রায় ৪৭০ক্যালরি। আর এই বিরানির জন্য আমাদের দরকার হয় খাসির মাংস, পোলাও চাল, মসল্লা, তেল আরোও অনেক কিছুই। যেকোনো 'সুপারশপ' থেকে সহজেই সবকিছু আমরা চাইলেই 'অর্থের' বিনিময়ে খরিদ করতে পারি। কিন্তু শুরুর দিকে তা এতটা সহজ ছিলোনা!
আর্কিওলজি আর পেলেওবায়োলজির কাঁধে চড়ে আমাদের তা জানার জন্য যেতে হবে অনেকটা পেছনে...
যেতে হবে ১৫হাজার বছর পুর্বে, যখন মানুষকে আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য শিকার খুঁজতে হতো। অন্য সব প্রাণির মত দৈহিকভাবে শক্তিশালী না হওয়ার কারণে আমাদের শিকারী জীবনটা বেশ কষ্ট আর সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পাড় হয়েছে। প্রতিটি কষ্টের ছাপ রয়েছে আমাদের ডিএনএ তে, ছাপ রয়েছে আমাদের দৈহিক আকৃতিতে এবং মস্তিষ্কে।
দৈহিক হিসেবে মানুষ হয়ে ওঠার গল্পটা নাহয় আরেকদিন করবো।
তো যেখানে ছিলাম আমরা, শিকারী জীবন। হ্যা, সেই শিকারী জীবনে আমাদের সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে সহজ শিকার ছিলো মাছ। আর এজন্যই সেসময়ের সবগুলো বসতি/সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো নদী/জলের তীরে। জলের কাছাকাছি থাকাটা আরোও কয়েকটি দিক থেকে লাভবান ছিলোঃ
- সহজ শিকার
- পান করার পানির অফুরন্ত উৎস
এবং যেহেতু তাদের একবেলা শিকার করেই দুইবেলা চলে যেতো, সুতরাং তাঁরা প্রচুর অবসর সময় হাতে পেয়েছিলো নিজেদের দিকে নজর দেয়ার। এবং ইতিহাস বলে, শিকারী এই মানুষদের অবসর কেটেছে বেশ সৌখিন ভাবেইঃ
- গুহাচিত্র এঁকে
- সংগীত চর্চায়
- গল্প বলে
- বংশবৃদ্ধি করে
অর্থাৎ মোদ্দাকথা এইযে, কৃষিবিপ্লব মানুষের ইতিহাসের পাতায় এনে দিয়েছিলো বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছিলো যাবতীয় মানবিক আবেগ।
The Transition from the Paleolithic Era to the Neolithic Revolution (13,000 - 8000 BC) |
- দক্ষিণ এশিয়াতে - ধান
- মেক্সিকোতে - ভুট্টা
- আন্দিজে - আলু
- Fertile Crescent* এ - গম
- আফ্রিকাতে - রাঙা আলু
তবে ফসল ভিন্ন ভিন্ন ভাবে চাষ হলেও যে জিনিসটি একইসাথে সব জায়গায় ছড়িয়েছিলো তা হলো, ধীরে ধীরে সবাই শিকারী জীবন থেকে অব্যহতি নিয়েছিলো। সবাই শিকারী জীবন ছেড়ে নিশ্চিত জীবনের পথ হিসেবে কৃষিকে বেছে নিতে লাগলো। নিশ্চয়ই এটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো (নাকি ছিলোনা?)।
সে যাহোক, যদিও এর ফলে কমে গেলো মানুষের অবসর, দিনের সংগীত আর রাতের উষ্ণ-বিছানাযাত্রা...
[Note: Fertile Crescent বলতে তৎকালীন মিডল ইস্টের উর্বর স্থানগুলোকে বুঝানো হয় যেমনঃ ইরাক, ইজিপ্ট, প্যালেস্টাইন, তুর্কি ইত্যাদি অঞ্চল]
কথা যখন উঠেছেই শিকারী এবং কৃষিযুগের মানুষের তফাত নিয়ে, চলুন আলোচনা করা যাক কৃষিযুগ আসলেই আমাদের কি কি দিলো আর কি কি কেড়ে নিলো সে বিষয়ে। পূর্বসূরিদের সাথে দেনাপাওনার হিসাব মেটানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ।
পশুপালন ছিলো মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য আমার মতে সবচেয়ে আরামের জীবন। ভেবে দেখুন, আপনার বাবার একপাল ভেড়া ছিলো, তিনি আজীবন সেসব চড়িয়ে আপনাকে বড় করেছেন যাতে করে আপনিও একদিন আপনার বাবার মতো করে ভেড়া চড়াতে পারেন। সাথে পাচ্ছেন শিকারী জীবনের মতন অফুরন্ত অবসর একইসাথে কৃষিজীবনের মতন নিশ্চিত খাবারের ব্যবস্থা। এছাড়া ভেড়া আপনাকে দিবে মাংশ, দুধ, পোশাক - একটি নিশ্চিত জীবনব্যবস্থা।
সে যাহোক, যদিও এর ফলে কমে গেলো মানুষের অবসর, দিনের সংগীত আর রাতের উষ্ণ-বিছানাযাত্রা...
[Note: Fertile Crescent বলতে তৎকালীন মিডল ইস্টের উর্বর স্থানগুলোকে বুঝানো হয় যেমনঃ ইরাক, ইজিপ্ট, প্যালেস্টাইন, তুর্কি ইত্যাদি অঞ্চল]
Hunter vs Modern Life |
কথা যখন উঠেছেই শিকারী এবং কৃষিযুগের মানুষের তফাত নিয়ে, চলুন আলোচনা করা যাক কৃষিযুগ আসলেই আমাদের কি কি দিলো আর কি কি কেড়ে নিলো সে বিষয়ে। পূর্বসূরিদের সাথে দেনাপাওনার হিসাব মেটানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ।
- কৃষিযুগের সর্বপ্রথম উপহার হলো, চাহিদা মোতাবেক খাবারের উৎসের নিশ্চয়তা। কোনো কারণে যদি খরা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটেও থাকে আর যাইহোক না খেয়ে আর থাকতে হয়নি আমাদের।
- অন্যদিকে নিত্যদিন নতুন মুখের খাবার উৎসের ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য আমরা গণহারে বন জঙ্গল সাফ করতে শুরু করলাম, পানি সেচের জন্য নদীতে বসালাম বাঁধ। বদলে যেতে লাগলো আবহাওয়া আর রাতারাতি একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেলো গোটা পৃথিবীর মানচিত্রের। যেখানে মিলিয়ন বছর ধরে ছিলো নদী-সরোবর, সেখানেই উঠতে লাগলো চর।
- কৃষিকাজের ২য় উপহার ছিলো (উপহার বলবো নাকি অভিশাপ!?) "খাদ্য উদ্বৃত্ত" বা অতিরিক্ত খাদ্য মজুদের আইডিয়া। যার ফলে গড়ে উঠলো শ্রম বিভাজন (রেসিজমও বটে)। কেননা আগে শিকারী যুগে সবাই মিলে শিকার করতো। যার ফলে ১০০০ক্যালরির খাবার সংগ্রহ করতে খরচ করতে হতো ১০০০ক্যালরির শ্রম, যার একটি প্রচ্ছন্ন ছাপ পরেছিলো জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে। কিন্তু কৃষিযুগে এসে যে লোক ভালো কাস্তে বানাতে পারে সে কেবল কাস্তেই বানিয়ে গেলো বছরের পর বছর। যে লোক ভালো চাষ করতে জানে সে লেগে গেলো চাষাবাদে নিজেকে মনোনিবেশ করতে। মানুষ পদার্পণ করলো স্বাধীন জীবনব্যবস্থা থেকে একটা একঘেয়েমী জীবনে।
- অন্যদিকে কৃষি একটি পরিশ্রমের কাজ, এতই পরিশ্রমের যে যার একটি প্রকট ফলাফল স্বরুপ মানুষ মানুষের উপর কর্তৃত্বের সিল মেরে দিতে লাগলো। নিজের কষ্টে অর্জিত ফসল অন্য কাউকে ফ্রিতে বিলিয়ে দিতে চাইতোনা কেউই, যারফলে হয়ে গেলো যার যার ফসলি জমির উপর মালিকানা খাটানোর প্রভাব। দাঙ্গা-বিদ্বেষের সূত্রপাত যদিও শিকারী যুগেও ছিলো তবে তা কেবলই ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি ব্যাপার ছিলো। শিকারী যুগে কখনো গোত্র vs গোত্র মারামারি করে খুন হয়েছে এমন হদিস পাওয়া যায়নি। কিন্তু কৃষিযুগে এসে এই মারামারির পরিধিটা ছড়িয়ে গেলো ব্যাপক ভাবে। এখন কেউ একজন বিবাদে লিপ্ত হওয়া মানে গোটা এক গ্রামের সাথে লিপ্ত হওয়া। জমির দখল নিতে যাওয়া মানেই রাজ্য vs রাজ্য দখলের প্রচেষ্টা।
- শিকারী যুগেও যে অঞ্চলে শিকার বেশি পাওয়া যেতো তা দখলের চেষ্টা ছিলো, তবে শিকার আর চাষের জমির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ীত্ব বেশি ছিলো জমির। আর সেই জমির দামও মেটাতে গেলে ঝড়াতে হতো ব্যপক রক্ত। কৃষিযুগের অনেক বিরাট বিরাট গনকবর যেনো আমাদের সেই রক্তক্ষয়ী ইতিহাসেরই স্বাক্ষ্য দেয়।
- কৃষিযুগে এসে মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়তে লাগলো মানুষের গড়আয়ু। যেখানে শিকারী যুগে একজন শিকারী ২৫-৩০ বছর বেঁচে থাকতো সেখানে কৃষিযুগে এসে একজন চাষি বছরের পর বছর একই জীবনযাপনের মাধ্যমে নিজেকে যাবতীয় অনিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বাচিয়ে রাখতে পারতো। তাছাড়া, বেশি বেশি চাষের জন্য দরকার বেশি জনবল আর তাই বেশি বেশি বংশবৃদ্ধিই হয়ে দাড়ালো একজন চাষির জন্য বাস্তবিক ইনভেস্ট। যেকারণে শিকারী যুগের তুলনায় কৃষিবিপ্লবের পর পৃথিবীতে প্রাণি হিসেবে মানুষের বংশবৃদ্ধির রেট হু হু করে বাড়তে লাগলো।
- অন্যদিকে বাচ্চা জন্মদানের পর পর শারিরীক শক্তি বিবেচনায় একজন ছেলে সন্তানের গুরুত্ব বাড়তে লাগলো চাষের বিবেচনায়। আর মেয়ে সন্তানেরা কেবলই বাচ্চা জন্মদানের ম্যাশিনে পরিণত হতে লাগলো, বন্দি হতে শুরু করলো ঘরের কোণায়। তৈরি হলো "Gender Discrimination"। যেকারণে আমরা ইতিহাস ঘাটলে অনেক সাহসী নারী যোদ্ধার দেখা পেলেও, নারী চাষীর দেখা পাইনা। শিকারী যুগে একজন নারী ও একজন পুরুষ সমানভাবে জীবনযাপন করতে পারতো, যে স্বাধীনতা নারীরা কৃষিবিপ্লবের পর হারিয়ে ফেললো।
...ব্লা ব্লা ব্লা...এভাবে আমি সারাদিন তুলনামূলক পয়েন্টাকারে লিখে যেতে পারি যা পড়ে আপনার মতে হতে পারে এই শিকারী জীবন vs কৃষি জীবন দুটোর কোনোটাই যদি না হতো! যদি নতুন কোন জীবনযাপন করতাম আমরা তাহলে বোধহয় এতসব ঝামেলায় যেতে হতোনা আমাদের!
তাহলে চলুন আপনাকে শুনাই রাখালজীবনের গল্প...
This is one of the 10,000 photographs in the Oscar Mamen collection, took pictures of people and animals in Mongolia between 1924 and 1932.
তাহলে প্রশ্নটা হল, এতো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেনো আমরা রাখালজীবন বেছে নিলাম না?
- সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তরটা হলো, মানুষ পোষ মানাতে পারে এমন প্রাণীর সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশই পারলে মানুষকেই খেয়ে ফেলে। গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, উট, মুরগী, হাস, ঘোড়া, গাধা এইতো হাতেগোণা কয়েকটা প্রাণীই চড়ানো যায়।
- এবং পরবর্তী সমস্যা হলো, রাখালের জীবন হলো যাযাবরদের। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন চারণভূমির খোঁজে হাটতেই হবে। যারকারণে কোনো স্থায়ী সংস্কৃতি, নগর গড়ে উঠতে পারেনা রাখালীজীবনে।
- শুরুতেই ধারণা করা হয়, অত্যাধিক মানুষ, অধিক মুখ, অধিক মুখের জন্য প্রয়োজন প্রচুর খাদ্য। শিকার সেই প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। কেননা এটাই সত্য যে, কৃষিযুগে এসে মানুষ অগাধ খাদ্যশস্যের মধ্যে বেড়ে উঠতে শুরু করে।
- কেউ কেউ আবার শিকার করতে করতেই বিভিন্ন ঔষধি গাছ-গাছড়া খোজায় নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলে। এবং নেহাতই গবেষণার ফল হিসেবে ধীরে ধিরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চাষভিত্তিক জীবনব্যবস্থা।
- আবার একদল ঐতিহাসিকের দাবী - কেবলমাত্র এলকোহল তৈরীর উদ্দেশ্যেই মানুষ শস্য উৎপাদন শুরু করে যা ধীরে ধীরে ব্যপকভাবে চাষে রূপ নেয়।
- ডারউইনের মতে, কৃষিবিপ্লব নেহাতই একটি প্রাকৃতিক খামখেয়াল। নিতান্তই এক্সিডেন্টালি মানুষ চাষাবাদ আবিষ্কার করে।
- অনেকে বিশ্বাস করে, কৃষিবিপ্লব আদৌ কখনো ঘটেইনি। ইভ্যুলুশনের কারণে মানুষের খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, বদলে যায় আমাদের খাদ্যাভ্যাস।
সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে ইতিহাসের পাতায় কৃষিবিপ্লবের কারণ খোঁজা এবং ছাদের উপর শুয়ে কল্পনায় শিকার করা প্রায় একই। লিখিত কোনো দলিল না থাকায় হয়ত আমাদের কখনোই জানা হবেনা কে প্রথম মাটিতে গমের বীজ পুতে সবাইকে বুঝিয়েছিলো, আজ থেকে আর নয় শিকার।
অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করি, হয়তো শিকারী হিসেবেই আমরা ভালো ছিলাম। যেদিন থেকে আমরা নিজেদের ডানা ছিড়ে খাঁচার পাখি হিসেবে স্বীকৃতি দিলাম সেদিন থেকে যেনো পৃথিবীও আমাদের থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগ, দূর্ভিক্ষ, বন উজাড়, নদী ভরাট, যুদ্ধ, অসাম্য, দাসপ্রথা - প্রভৃতির বিনিময়ে আমরা কি কিনলাম, ভরপেট ৪৭০ ক্যালরির একপ্লেট কাচ্চি?
এ সদাই না কিনলেই হয়তো পৃথিবীটা আরোও সুন্দর থাকতো। মানুষ হিসেবে এই যে পৃথিবীর সাথে আমাদের বনিবনা সেই গল্পের কৃষিবিপ্লবের অধ্যায় আজ এটুকুই থাকুক। তারচেয়ে বরং কিছুক্ষন ভাবুন, আমাদের পুর্বপুরুষরা যেমন না বুঝেই কিছু বিপ্লব টেনে এনেছিলো যা সাময়িকভাবে তাদের শান্তি দিলেও বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি আমরা অনেক। এভাবেই যেনো আপনার আমার নেয়া কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে না ভোগায়।
ভাবুন, কৃষিবিপ্লবের মতই আদৌ আমাদের নিউক্লিয়ার রেভ্যুলুশন প্রয়োজন কিনা? ভাবুন পৃথিবীর জীবাশ্ম জ্বালানী পুড়িয়ে আকাশে নতুন গ্রহ খুঁজতে চাওয়া কতটা দরকার? ভাবুন...ভাবুন...
মানুষ হিসেবে জন্মে যদি কিছু নাইবা ভাবলেন তবে প্রাণি হিসেবে উর্ধ্বে থাকতে চাওয়াটা বেমানান।
... ... ...
"পৃথিবী ও মানুষ"
- পর্ব ০২. কৃষিবিপ্লব কি মানবজাতির অভিশাপ?
লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ
তারিখঃ ২২০২/৪০/৩০
Source: "Sapiens - A Brief History of Mankind" by Yuval Noah Harari, প্রকৃতি ও মানুষের ক্রমবিকাশ by ডা. জাহিদ মনজুর, Khan Academy, Wikipedia.
- পর্ব ০২. কৃষিবিপ্লব কি মানবজাতির অভিশাপ?
লেখাঃ রোড নং ছত্রিশ
তারিখঃ ২২০২/৪০/৩০
Source: "Sapiens - A Brief History of Mankind" by Yuval Noah Harari, প্রকৃতি ও মানুষের ক্রমবিকাশ by ডা. জাহিদ মনজুর, Khan Academy, Wikipedia.
(*চলবে...)
Post a Comment