স্বচ্ছ সিরিজের - শ্বেতস্বর্গ
ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেলো।
৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, আমি আপাতত রুমটায় একা নই। যদিও মনে আছে, ঘুমানোর সময় একাই ঘুমিয়েছিলাম।
চোখ না খুলে ভাবছি আমার রুমে কি থাকতে পারে?
১টা গন্ধ আসছে। আমার দোতলার এ রুমে আচমকা গন্ধ আসার দুটো উৎস আছে, মেসের পিছনের ডাস্টবিন আর রকিব ভাইয়ের আঁতর। দুটো উৎস ভিন্ন হলেও, গন্ধ এবং স্থায়িত্ব দুটোই বেশ গাঢ়!
তবে আপাতত এটা ৩য় আরোও ১টি গন্ধ পাচ্ছি আজ। হালকা বেলি ফুলের ঘ্রাণের মত, ঘোরলাগা!
আবেশে মন চাইছে আবার ঘুমিয়ে যাই। মুচকি হাসলাম...
হাসলাম কারন আমি গন্ধটার উৎস চিনতে পেরেছি! ঠিক তখনি ঘরে থাকা বস্তুটা আমাকে হঠাৎ ধাক্কানো শুরু করে দিলো!
- 'ধ্যাৎ!! চোখ পিটপিট করে আবার ঘুমোচ্ছে! এই উঠো বলছি...'
... ... ...
আমি স্বচ্ছ। আর আপাতত ঐ গন্ধের উৎস হলো তিথী। বেলী ফুলের এই গন্ধওয়ালা পারফিউমটাই ও ইউজ করে। যদিও ওর মতে, এটা মোটেও বেলী ফুলের গন্ধ নয়। কিন্তু মেয়েটা আমার মেসে এই সাতসকালে এসেছে কেনো?
কারণ, আজতো ভ্যালেন্টাইনস ডে।
- 'মোবাইলটা ইউজ করো কেনো? যদি সেটা অফ করেই রাখো!'
- 'চার্জ ছিলোনা আসলে'
- 'মিথ্যা! আমিতো এখন অন করে দেখছি ফুল চার্জ!'
- 'ঘুমানোর আগে চার্জে দিসিলাম'
- 'মিথ্যা! তোমার চিকন পিনের চার্জার নষ্ট!'
- 'আরে বাবা, পিন্টুর থেকে এনে দিছিলাম রাতে'
- 'আবারো মিথ্যা! পিন্টু এখন বাড়িতে!'
- 'হাহ্...ঠিকাছে, হার মানছি!'
- 'তুমি কবে একটু স্বাভাবিক হবে স্বচ্ছ?'
- 'আমি কি পাগল নাকি!..জানোই তো, মোবাইল ইউজ করা আমার শোভা পায় না!'
- 'থামো...মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসতেছে! ব্রাশ করে আসো যাও!'
কাঁথাসহ বাথরুমের দিকে গেলাম।
- 'আরে কাঁথা নিয়ে কই যাও?'
- 'গায়ে জামা নেই'
- 'হিহিহিহি...আচ্ছা যাও।...আর শোন, ১টা পান্জাবী পড়ে আসো!'
খানিকবাদে আধোয়া পান্জাবীসমেত রুমে এসে দেখি, তিথী ঘর গুছাচ্ছে। আর আমার অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাইরে ছুড়ে ফেলছে! এই যেমনঃ কয়েক বছরের পুরান ম্যাগাজিন, ১পাটি স্যান্ডেল,ম্যাচের আধপোড়া কাঠি সব সব একটা একটা করে ফেলে দিচ্ছে। আমার ফেরত আসাটা লক্ষ্য করেনি হয়তো।
দরজায় দাড়িয়ে দেখছি মেয়েটাকে। হালকা মিষ্টি কালারের ১টা ড্রেস পরে এসেছে আজ।
নীল ওড়নাটা মেয়েলি ঢঙে গলাসমেত কোমরে প্যাচানো। কানে আমার পছন্দের ঐ পাথরের দুলটা পড়েছে। চোখে টানা কাজল। বামপায়ে পায়েল। চুলগুলো গুছিয়ে বাধা, যদিও খানিক বাদে বাদে কপালের এক পাশের অবাধ্য নেমে আসা কিছু চুল ঝাপটা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে। মুখে কোন রকম মেকাপ কীট্ ব্যবহার করেনি, তবু কতটা মিষ্টি লাগছে দেখতে!
আর দশটা, নাহ আর ১০০টা ছেলের নিকট এমন মেয়ে কল্পনার মত। প্রতিবারের মত আবারো তিথীর প্রেমে পরে যেতে খুব ইচ্ছা করছে। মেয়েটা আমার কত খেয়াল রাখে, কত ভালোবাসে! বিনিময়ে আমি??
নাহ্, সবকিছুতে বিনিময় থাকতে নেই! এই যেমন ভালোবাসা।
তিথী সেটা মেনে নিয়েছে। বাঙালী মেয়েদের এই মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাটা প্রচুর। মুচকি হাসলাম..
- 'ছিঃ...এটা কি পরেছো!..ওয়াক! বিশ্রী গন্ধ আসছে!'
- 'কাজের বুয়াকে এটা ধুইতে দিতে ভুলে গেছিলাম!'
- 'এটা পড়ে আমার সাথে হাটতে পারবানা!...জানতাম, এ অবস্থাই পাবো। টেবিলের উপর প্যাকেটে ১টা পান্জাবী আছে, যাও পড়ে এসো জলদি!!'
১০মিনিট বাদে, আকাশী রঙের ছোপ দেয়া একটা পান্জাবীতে নিজেকে পেলাম। হালকা ঢোলা হয়েছে, তবে বেশ মোলায়েম।
- 'বাহ! মি. রোড মাষ্টার, আপনাকে একটু মানুষের মত দেখাচ্ছে! একটু ঢোলা হয়েছে গায়ে, তবে এতেই চলবে!.. এখন চলেন, পেটে কিছু দিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন!'..
... ... ...
সময় ২টা ৪০। C.R.B এর রাস্তায় হাটছি।
বাইরে থেকে দেখতে কাপলের মতই লাগছে আমাদের, তবে আমরা ওমনটা নই!
আমি চারপাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে হাটছি। আর তিথী হাটছে আমাকে দেখতে দেখতে।
এই C.R.B তেই ১ম দেখেছিল ও আমাকে। তখন জায়গাটা এমন ছিলোনা অবশ্য। অনেক শান্ত ছিলো। ঐ ঢালাই করা মঞ্চটাও ছিলোনা।
আমি বসেছিলাম গাছের শিকড়ের উপর। বসে বসে পা দুলাচ্ছিলাম আর সামনের দুইটা কুকুরে মধ্যে মারামারি দেখছিলাম।
- 'Excuse me!'
কে যেনো পিছন থেকে টোকা দিলো গায়ে। মুখ তুলে তাকালাম।
- 'আপনার কাছে ১০০টাকা ভাংতি হবে? আমি রিক্সাভাড়া মেটাতে পারছিনা!'
গেলাম ওর সাথে রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখা রিকশার কাছে। রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করলাম,
- 'ভাড়া কত?'
- '৫০ টাকা'
- 'চৌমুহনি যাবেন?'
- 'হ...৫০ টাকা'
- 'চলেন'
রিকসায় চেপে বসলাম।
- 'আপামনি আফনের ভাড়া?'
- 'আমি দিবো'
মেয়েটা ক্রুর হাসি দিলো একটা। এমন যেনো, "মদনা তোমাদের আমি চিনি সুন্দরী দেখলেই এমনটা করো।"
কিন্তু আমার পকেটে যে ১০০টাকাই ছিলো, এটা আর বললাম না।
তারপর দেখা হয় এক বৃষ্টিতে।
আমি এক বাড়ির পাঁচিল টপকে কদম ফুল চুরি করতেছিলাম। দাড়োয়ান ব্যাটা হুট করে এসে ধরে ফেলে আমাকে ক্যাক করে। চিৎকার চেচামেচি করে বাসার মানুষজন এক জায়গায় করে সে।
একটুপর দেখি গাড়িবারান্দায় তিথী অবাক হয়ে দেখছে আমাকে। আমাকে চিনতে পেরে বললো,
- 'আপনি কি কেবলি কদম নিতেই এসেছেন?'
- 'জ্বী না...আমি আমার পাওনা ৫০টাকাটা ফেরত নিতে এসেছিলাম! সুন্দর কদম দেখে লোভ সামলাতে পারিনি'
যদিও কেবল আবিষ্কার করলাম, এটা তিথীদের বাড়ি। কিন্তু ডাহা মিথ্যাটা বলতেই হলো।
- '৫০টাকা তো ভাংতি নেই..১০০টাকাই নিয়ে যান আপনি!'
- 'না..৫০টাকাই নিবো। যদি দিতে না পারেন, তবে আগামি ১০বার আমি আপনাদের গাছ থেকে কদম পেড়ে নিয়ে যাবো!'
মেয়েটা সেদিন অবাক হয়ে আমাকে বোঝার চেষ্টা করছিলো, আমি পাগল কিনা। এই যেমন এখনও করে চলেছে চেষ্টা। আমি নিজেই আমাকে বুঝিনা। ও বুঝবে কিভাবে!
যাহোক একটা ঘাসের পরিষ্কার জায়গা দেখে বললাম,
- 'চলো কোথাও বসি'
- 'কেনো? তুমি নাকি খুব হাটতে পারো!...চুপচাপ হাটো।'
- 'বাসায় বলে এসেছো? নাকি তোমার গুন্ডা কাজিন এবারো আমাকে গরুখোজা খুজবে, জেরা করবে তোমার জন্য!'
- 'হুম..বান্ধবীর বাসায় যাবো বলেছি'
- 'হু'
... ... ...
সন্ধ্যার আগে আগে তিথীকে বাসায় পৌছে দিয়ে হেটে হেটে ফিরছি। সারাদিনটার কথা ভাবছি। বছরের এই ১টা দিন মেয়েটাকে দিতেই হয়। পুরোটা বছরই তো ডুব মেরে থাকি।
আনমনে হাটতে হাটতে কখন যে ১টা পিলারের সাথে ধাক্কা খেলাম, কখন যে একটা গাড়ি এসে পায়ে ধাক্কা মারলো টেরই পেলাম না! নাহ, সিনেম্যাটিক স্টাইলে স্লো-মোশনে এসব ঘটেনি। হয়েছে যথেষ্ট দ্রুত। তিথীদের এলাকা থেকে মেইনরোডে প্রবেশের মোড়েই এক্সিডেন্টটা ঘটল।
মজার কথা হলো, জ্ঞান হারানোর আগমূহুর্ত পর্যন্ত আমি কেবল চারপাশে জটলা বাড়তে দেখলাম। কেউ একজন এসে ধরলোনা আমাকে। নিশ্চয়ই পুলিশের ভয়ে। এদেশের মানুষ পুলিশকে ভীষণ ভয় পায়। কথায় আছে না? 'পুলিশে ছুলে আঠারো ঘা!'
এরপর আরকিছু মনে নেই...
... ... ...
স্বর্গ সাদা হয়।
এই থিওরিটা মানব মস্তিষ্কে বোধহয় ন্যাচারেলি গেঁথে গেছে। আমার মনে হচ্ছে আমি ছোটখাট এক শ্বেতস্বর্গে শুয়ে আছি। যেহেতু রুমটা মোটেই আমার মেসের মত না!
যদিও জানি, ছোটখাট এক্সিডেন্টে স্বর্গে যাওয়া যায়না! আর গেলেও স্বর্গে আমার এন্ট্রি পাওয়ার কথা না!
মাথায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। বেশী ভাবতে পারছিনা। ঘুমানো দরকার..
ঘুমানোর আগমুহুর্তে হালকা বেলী ফুলের গন্ধ নাকে ধাক্কা মারলো। মেয়েটা বরাবরের মত এবারও খবর পেয়ে গেছে।
চোখ না মেলেও বলতে পারছি, আমার ডানপাশে বসে আছে। আর আজ রাতটা এভাবেই থাকবে।
আচ্ছা, তিথী কি এটা জানে, ভুল করে হলেও একদিন আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি! সেই যে পড়েছি আর উঠতে পারিনি। কয়েকবার চেষ্টাও করেছিলাম।
জানি এটা সে জানেনা। আর জানেনা বলেই, জানার আগ্রহে প্রতিটাদিন আমাকে ও আরোও বেশি করে ভালোবাসতে থাকে। মুচকি হাসলাম।
সুস্থ হয়ে বেলী ফুলের পারফিউমটা চেয়ে নিবো তিথীর থেকে। গন্ধটা বেশ ঘুম ঘুমটাইপ!
- 'তিথী!'
- 'হুম'
- 'জাতীয় সুন্দরবন দিবস ছিলো আজ, জানো?'
- 'না জানিনা...পপ কুইজ দেয়ার ইচ্ছাও নেই এখন। তুমি ঘুমাওতো!'
- 'তোমাকে সুন্দরবন দিবসের শুভেচ্ছা'
তিথীর উত্তরটা শুনতে পেলাম না।
আপাতত আমি ঘুমোচ্ছি...
... ... ...
সিরিজঃ স্বচ্ছ
গল্পঃ ০৭
তারিখঃ ৫১০২/২০/৫১.
৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, আমি আপাতত রুমটায় একা নই। যদিও মনে আছে, ঘুমানোর সময় একাই ঘুমিয়েছিলাম।
চোখ না খুলে ভাবছি আমার রুমে কি থাকতে পারে?
১টা গন্ধ আসছে। আমার দোতলার এ রুমে আচমকা গন্ধ আসার দুটো উৎস আছে, মেসের পিছনের ডাস্টবিন আর রকিব ভাইয়ের আঁতর। দুটো উৎস ভিন্ন হলেও, গন্ধ এবং স্থায়িত্ব দুটোই বেশ গাঢ়!
তবে আপাতত এটা ৩য় আরোও ১টি গন্ধ পাচ্ছি আজ। হালকা বেলি ফুলের ঘ্রাণের মত, ঘোরলাগা!
আবেশে মন চাইছে আবার ঘুমিয়ে যাই। মুচকি হাসলাম...
হাসলাম কারন আমি গন্ধটার উৎস চিনতে পেরেছি! ঠিক তখনি ঘরে থাকা বস্তুটা আমাকে হঠাৎ ধাক্কানো শুরু করে দিলো!
- 'ধ্যাৎ!! চোখ পিটপিট করে আবার ঘুমোচ্ছে! এই উঠো বলছি...'
... ... ...
আমি স্বচ্ছ। আর আপাতত ঐ গন্ধের উৎস হলো তিথী। বেলী ফুলের এই গন্ধওয়ালা পারফিউমটাই ও ইউজ করে। যদিও ওর মতে, এটা মোটেও বেলী ফুলের গন্ধ নয়। কিন্তু মেয়েটা আমার মেসে এই সাতসকালে এসেছে কেনো?
কারণ, আজতো ভ্যালেন্টাইনস ডে।
- 'মোবাইলটা ইউজ করো কেনো? যদি সেটা অফ করেই রাখো!'
- 'চার্জ ছিলোনা আসলে'
- 'মিথ্যা! আমিতো এখন অন করে দেখছি ফুল চার্জ!'
- 'ঘুমানোর আগে চার্জে দিসিলাম'
- 'মিথ্যা! তোমার চিকন পিনের চার্জার নষ্ট!'
- 'আরে বাবা, পিন্টুর থেকে এনে দিছিলাম রাতে'
- 'আবারো মিথ্যা! পিন্টু এখন বাড়িতে!'
- 'হাহ্...ঠিকাছে, হার মানছি!'
- 'তুমি কবে একটু স্বাভাবিক হবে স্বচ্ছ?'
- 'আমি কি পাগল নাকি!..জানোই তো, মোবাইল ইউজ করা আমার শোভা পায় না!'
- 'থামো...মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসতেছে! ব্রাশ করে আসো যাও!'
কাঁথাসহ বাথরুমের দিকে গেলাম।
- 'আরে কাঁথা নিয়ে কই যাও?'
- 'গায়ে জামা নেই'
- 'হিহিহিহি...আচ্ছা যাও।...আর শোন, ১টা পান্জাবী পড়ে আসো!'
খানিকবাদে আধোয়া পান্জাবীসমেত রুমে এসে দেখি, তিথী ঘর গুছাচ্ছে। আর আমার অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাইরে ছুড়ে ফেলছে! এই যেমনঃ কয়েক বছরের পুরান ম্যাগাজিন, ১পাটি স্যান্ডেল,ম্যাচের আধপোড়া কাঠি সব সব একটা একটা করে ফেলে দিচ্ছে। আমার ফেরত আসাটা লক্ষ্য করেনি হয়তো।
দরজায় দাড়িয়ে দেখছি মেয়েটাকে। হালকা মিষ্টি কালারের ১টা ড্রেস পরে এসেছে আজ।
নীল ওড়নাটা মেয়েলি ঢঙে গলাসমেত কোমরে প্যাচানো। কানে আমার পছন্দের ঐ পাথরের দুলটা পড়েছে। চোখে টানা কাজল। বামপায়ে পায়েল। চুলগুলো গুছিয়ে বাধা, যদিও খানিক বাদে বাদে কপালের এক পাশের অবাধ্য নেমে আসা কিছু চুল ঝাপটা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে। মুখে কোন রকম মেকাপ কীট্ ব্যবহার করেনি, তবু কতটা মিষ্টি লাগছে দেখতে!
আর দশটা, নাহ আর ১০০টা ছেলের নিকট এমন মেয়ে কল্পনার মত। প্রতিবারের মত আবারো তিথীর প্রেমে পরে যেতে খুব ইচ্ছা করছে। মেয়েটা আমার কত খেয়াল রাখে, কত ভালোবাসে! বিনিময়ে আমি??
নাহ্, সবকিছুতে বিনিময় থাকতে নেই! এই যেমন ভালোবাসা।
তিথী সেটা মেনে নিয়েছে। বাঙালী মেয়েদের এই মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতাটা প্রচুর। মুচকি হাসলাম..
- 'ছিঃ...এটা কি পরেছো!..ওয়াক! বিশ্রী গন্ধ আসছে!'
- 'কাজের বুয়াকে এটা ধুইতে দিতে ভুলে গেছিলাম!'
- 'এটা পড়ে আমার সাথে হাটতে পারবানা!...জানতাম, এ অবস্থাই পাবো। টেবিলের উপর প্যাকেটে ১টা পান্জাবী আছে, যাও পড়ে এসো জলদি!!'
১০মিনিট বাদে, আকাশী রঙের ছোপ দেয়া একটা পান্জাবীতে নিজেকে পেলাম। হালকা ঢোলা হয়েছে, তবে বেশ মোলায়েম।
- 'বাহ! মি. রোড মাষ্টার, আপনাকে একটু মানুষের মত দেখাচ্ছে! একটু ঢোলা হয়েছে গায়ে, তবে এতেই চলবে!.. এখন চলেন, পেটে কিছু দিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন!'..
... ... ...
সময় ২টা ৪০। C.R.B এর রাস্তায় হাটছি।
বাইরে থেকে দেখতে কাপলের মতই লাগছে আমাদের, তবে আমরা ওমনটা নই!
আমি চারপাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে হাটছি। আর তিথী হাটছে আমাকে দেখতে দেখতে।
এই C.R.B তেই ১ম দেখেছিল ও আমাকে। তখন জায়গাটা এমন ছিলোনা অবশ্য। অনেক শান্ত ছিলো। ঐ ঢালাই করা মঞ্চটাও ছিলোনা।
আমি বসেছিলাম গাছের শিকড়ের উপর। বসে বসে পা দুলাচ্ছিলাম আর সামনের দুইটা কুকুরে মধ্যে মারামারি দেখছিলাম।
- 'Excuse me!'
কে যেনো পিছন থেকে টোকা দিলো গায়ে। মুখ তুলে তাকালাম।
- 'আপনার কাছে ১০০টাকা ভাংতি হবে? আমি রিক্সাভাড়া মেটাতে পারছিনা!'
গেলাম ওর সাথে রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখা রিকশার কাছে। রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করলাম,
- 'ভাড়া কত?'
- '৫০ টাকা'
- 'চৌমুহনি যাবেন?'
- 'হ...৫০ টাকা'
- 'চলেন'
রিকসায় চেপে বসলাম।
- 'আপামনি আফনের ভাড়া?'
- 'আমি দিবো'
মেয়েটা ক্রুর হাসি দিলো একটা। এমন যেনো, "মদনা তোমাদের আমি চিনি সুন্দরী দেখলেই এমনটা করো।"
কিন্তু আমার পকেটে যে ১০০টাকাই ছিলো, এটা আর বললাম না।
তারপর দেখা হয় এক বৃষ্টিতে।
আমি এক বাড়ির পাঁচিল টপকে কদম ফুল চুরি করতেছিলাম। দাড়োয়ান ব্যাটা হুট করে এসে ধরে ফেলে আমাকে ক্যাক করে। চিৎকার চেচামেচি করে বাসার মানুষজন এক জায়গায় করে সে।
একটুপর দেখি গাড়িবারান্দায় তিথী অবাক হয়ে দেখছে আমাকে। আমাকে চিনতে পেরে বললো,
- 'আপনি কি কেবলি কদম নিতেই এসেছেন?'
- 'জ্বী না...আমি আমার পাওনা ৫০টাকাটা ফেরত নিতে এসেছিলাম! সুন্দর কদম দেখে লোভ সামলাতে পারিনি'
যদিও কেবল আবিষ্কার করলাম, এটা তিথীদের বাড়ি। কিন্তু ডাহা মিথ্যাটা বলতেই হলো।
- '৫০টাকা তো ভাংতি নেই..১০০টাকাই নিয়ে যান আপনি!'
- 'না..৫০টাকাই নিবো। যদি দিতে না পারেন, তবে আগামি ১০বার আমি আপনাদের গাছ থেকে কদম পেড়ে নিয়ে যাবো!'
মেয়েটা সেদিন অবাক হয়ে আমাকে বোঝার চেষ্টা করছিলো, আমি পাগল কিনা। এই যেমন এখনও করে চলেছে চেষ্টা। আমি নিজেই আমাকে বুঝিনা। ও বুঝবে কিভাবে!
যাহোক একটা ঘাসের পরিষ্কার জায়গা দেখে বললাম,
- 'চলো কোথাও বসি'
- 'কেনো? তুমি নাকি খুব হাটতে পারো!...চুপচাপ হাটো।'
- 'বাসায় বলে এসেছো? নাকি তোমার গুন্ডা কাজিন এবারো আমাকে গরুখোজা খুজবে, জেরা করবে তোমার জন্য!'
- 'হুম..বান্ধবীর বাসায় যাবো বলেছি'
- 'হু'
... ... ...
সন্ধ্যার আগে আগে তিথীকে বাসায় পৌছে দিয়ে হেটে হেটে ফিরছি। সারাদিনটার কথা ভাবছি। বছরের এই ১টা দিন মেয়েটাকে দিতেই হয়। পুরোটা বছরই তো ডুব মেরে থাকি।
আনমনে হাটতে হাটতে কখন যে ১টা পিলারের সাথে ধাক্কা খেলাম, কখন যে একটা গাড়ি এসে পায়ে ধাক্কা মারলো টেরই পেলাম না! নাহ, সিনেম্যাটিক স্টাইলে স্লো-মোশনে এসব ঘটেনি। হয়েছে যথেষ্ট দ্রুত। তিথীদের এলাকা থেকে মেইনরোডে প্রবেশের মোড়েই এক্সিডেন্টটা ঘটল।
মজার কথা হলো, জ্ঞান হারানোর আগমূহুর্ত পর্যন্ত আমি কেবল চারপাশে জটলা বাড়তে দেখলাম। কেউ একজন এসে ধরলোনা আমাকে। নিশ্চয়ই পুলিশের ভয়ে। এদেশের মানুষ পুলিশকে ভীষণ ভয় পায়। কথায় আছে না? 'পুলিশে ছুলে আঠারো ঘা!'
এরপর আরকিছু মনে নেই...
... ... ...
স্বর্গ সাদা হয়।
এই থিওরিটা মানব মস্তিষ্কে বোধহয় ন্যাচারেলি গেঁথে গেছে। আমার মনে হচ্ছে আমি ছোটখাট এক শ্বেতস্বর্গে শুয়ে আছি। যেহেতু রুমটা মোটেই আমার মেসের মত না!
যদিও জানি, ছোটখাট এক্সিডেন্টে স্বর্গে যাওয়া যায়না! আর গেলেও স্বর্গে আমার এন্ট্রি পাওয়ার কথা না!
মাথায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। বেশী ভাবতে পারছিনা। ঘুমানো দরকার..
ঘুমানোর আগমুহুর্তে হালকা বেলী ফুলের গন্ধ নাকে ধাক্কা মারলো। মেয়েটা বরাবরের মত এবারও খবর পেয়ে গেছে।
চোখ না মেলেও বলতে পারছি, আমার ডানপাশে বসে আছে। আর আজ রাতটা এভাবেই থাকবে।
আচ্ছা, তিথী কি এটা জানে, ভুল করে হলেও একদিন আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি! সেই যে পড়েছি আর উঠতে পারিনি। কয়েকবার চেষ্টাও করেছিলাম।
জানি এটা সে জানেনা। আর জানেনা বলেই, জানার আগ্রহে প্রতিটাদিন আমাকে ও আরোও বেশি করে ভালোবাসতে থাকে। মুচকি হাসলাম।
সুস্থ হয়ে বেলী ফুলের পারফিউমটা চেয়ে নিবো তিথীর থেকে। গন্ধটা বেশ ঘুম ঘুমটাইপ!
- 'তিথী!'
- 'হুম'
- 'জাতীয় সুন্দরবন দিবস ছিলো আজ, জানো?'
- 'না জানিনা...পপ কুইজ দেয়ার ইচ্ছাও নেই এখন। তুমি ঘুমাওতো!'
- 'তোমাকে সুন্দরবন দিবসের শুভেচ্ছা'
তিথীর উত্তরটা শুনতে পেলাম না।
আপাতত আমি ঘুমোচ্ছি...
... ... ...
সিরিজঃ স্বচ্ছ
গল্পঃ ০৭
তারিখঃ ৫১০২/২০/৫১.
Post a Comment