-->

মনস্তাত্ত্বিক কথাবার্তা


কিছু প্রশ্ন করছি, ওকে? ভাবুন কেবল, উত্তর দিতে হবেনা।

প্রশ্ন ১: "ক" এর পর "খ" কেনো হলো, কেনো "খ" এর পর "ক" এলোনা?

প্রশ্ন ২: যদি প্রথম এলফ্যাবেট আবিষ্কারক তার মর্জিমাফিক সিকুয়েলটা দিয়ে থাকে তবে কেনো আপনার বাচ্চা "খ, ক, গ" এভাবে পড়লে বকা দিবেন?
বাচ্চাকে কেনো তার মর্জিমাফিক চলতে দিচ্ছেন না?

প্রশ্ন ৩: উপরের ২টা প্রশ্ন যদি আপনাকে দ্বন্দে ফেলে তবে আপনি কি আমাকে পাগল বলবেন? কেনো বলবেন?
নাকি প্রশ্নটা যৌক্তিক ভেবে আমাকে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ ভাববেন? কেনো ভাববেন?

উত্তর আমার লাগবেনা, উত্তরগুলো সাজিয়ে নিজেকেই দিয়েন। তারচে বরং আসুন আমরা আলাপ করি, বর্তমানের ট্রেন্ডিং ইস্যু নিয়ে।
আলাপ করি চলুন, কে কি করলো সেটা নিয়ে।
আলাপ করি, কিভাবে আমরা আমাদের সারাদিনের বিনোদনগুলোকে আরোও বিনোদনমুখী করতে পারি সেটা নিয়ে...

এটা করতেই তো মস্তিষ্কটা দেয়া হয়েছে আপনাকে তাইনা?

আমি বলতে চাইছি, আমরা কত সহজেই ইদানীং মানুষকে জাজ করতে বসে যাই এবং নিজ নিজ ক্রাইটেরিয়ায় বসে নিজস্ব স্টাইলে জাজিং করেও ফেলি।
কিন্তু কয়জন বুঝতে পারি, আমাদের জাজমেন্ট সবসময় সঠিক নাও হতে পারে?
কয়জন বুঝি, নিজেদের জাজমেন্টে থাকছে অনেক ফারাক?
একদম শুরুতেই আমি এলফ্যাবেট নিয়ে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম মনে আছে?
প্রশ্নগুলো থেকে একেকজনের একেক রকম উত্তর আসবে স্বাভাবিক, তবে একটা কমন উত্তর সবার কাছেই পাওয়া যাবে এবং তা পানির মত ক্লিয়ার,

১) সমাজের প্রতিটা নিয়মের শুরুটা একজন/একদল মানুষ ক্রিয়েট করছে, বাকিরা সে নিয়ম ফলো করছে। জেনে বা না জেনে।
২) সেই একজন/একদল মানুষগুলো অদ্ভুতভাবে অসাধারণ। অর্থাৎ নিয়ম ফলো করা মানুষের লেভেলে তারা পরেনা।
৩) একটা নিয়ম একবার বলবৎ হয়ে গেলে পরবর্তিতে নিয়মটি পরিবর্তন বা পরিমার্জন আমাদের মত নিয়ম ফলো করা মানুষের নিকট অস্বাভাবিক একটি ভুল মনে হয়।

যদি এই ৩টি পয়েন্ট ক্লিয়ার হয়েই থাকে, তাহলে এটাও ক্লিয়ার যে,
১) আপনি আমি নিয়ম ফলো করা মানুষের দলে, নিয়ম তৈরি করার দলে নই।
২) যখন আপনার বাচ্চা "খ, ক, গ" পড়ছে তখন আপনি তাকে জোর করে "ক, খ, গ" পড়িয়ে, তাকেও আপনার মত নিয়ম ফলো করা মানুষে পরিণত করতে চাইছেন।
৩) আপনাকেও আপনার বাবা এভাবেই নিয়ম ফলো করতে শিখিয়েছেন।

এখানে ক্লিয়ার করে রাখি, এলফ্যাবেটের উদাহরণটা কেবলি একটি উদাহরণ ছিলো।
শুধু এলফ্যাবেট নয়, খেয়াল করে দেখেন আপনার আশেপাশের সব নিয়মই আগে থেকে ক্রিয়েট করা।
তাহলে কি মাথায় এই প্রশ্নটা আসা স্বাভাবিক না যে, "রুল ক্রিয়েট করা মানুষগুলো তাহলে কিভাবে রুল ক্রিয়েট করলো?"

সহজভাবেই বলা যায় তারা অন্ধ অনুকরণে বিশ্বাসী ছিলেন না।
তারা নিয়মগুলোর প্রয়োজনীয়তা মেপেছেন, বাতুলতা বর্জন করেছেন, এবং অবশ্যই জনস্বার্থে প্রায়োগিক লাভের দিকটা চিন্তা করেই নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।
জগতের কোন নিয়মই সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়, সার্বজনীন সত্য বলতে যা দেখি সেখানেও পাবেন কিছু ভুল।

আমার দেশে সকালে যখন সূর্য উঠে, তখন দুনিয়ার উলটো দিকের দেশে সূর্যটা ডুবে।
আপনার ছেলেটা যদি সূর্যের এই দ্বিমুখী নীতির উপর প্রশ্ন তুলে আপনি তাকে বকবেন?
যেটা আপনার কাছে '6' সেটা আমার কাছে '9' হলে দোষটা আমার?
দোষ তার যে "6/9" লিখতে গিয়ে এই জিনিসটা খেয়াল করেনাই।

তাহলে কেনো আপনি নিজস্ব মতামত আরেকজনের উপর চাপাবেন?
অন্যকে জাজ করতে গিয়ে কেনো আপনি ভুলে যাবেন, "এঙ্গেল অব ভিউ" বলে একটা জিনিস আছে?

নিয়ম ফলো করুন আপত্তি নেই, কিন্তু যখন অন্য কেউ প্রচলিত নিয়মের বাইরে চলছে তাকে নিয়মের ব্যাখ্যা না জানিয়ে আঁটকে দিয়ে তার আগ্রহটা মাটি করতে আপনি পারেন না।
বাচ্চা যদি "ক, খ, গ" কি জিনিস বুঝতে পারে এবং বুঝার পর "খ, ক, গ" পড়তে থাকে তাকে বাঁধা দেয়ার দরকার কি?
এলফ্যাবেট চিনতে পারাটাই তো মূখ্য, সিকুয়েলটা কিন্তু না।
বরং আপনি বাঁধা না দিয়ে তাকে টেস্ট করুন আসলেই সে "ক, খ, গ" কি জিনিস চিনেছে কিনা।

তেমনি কেউ একজন আপনার মতের মত চলছেনা বলে তাকে আপনি জোরপূর্বক নিজ মতাদর্শে আনতে পারেন না।
আগে নিজ মতের ব্যাপারে শিওর হোন, তারপর অপরের মতের সাথে তুলনা করুন, তারপর নাহয় তাকে টেস্ট করুন "আমারটা ভালো না তোমারটা".
নিশ্চয়ই উপরওয়ালা জ্ঞান দিয়েছেন যাচাই বাছাই করে সেরাটা বের করার জন্য,
অন্ধ অনুকরণ করার জন্য নয়.

... ... ... ...

পাশের বাসার মেয়েটা টিশার্ট পরছে, এতে আপনি খুত পেলেন।
তার পাশের বাসার মেয়েটা সালোয়ার পরছে, এতে আপনি খুত পেলেন।
পুনরায় প্রথম বাসার মেয়েটা বোরখা পরা শুরু করলো ক্যান হঠাৎ, এতেও আপনার মন খুতখুত করছে?
তাহলে বলবো আপনি সমস্যায় আছেন।

আগে দেখুন আপনার লজিক কি বলে? সেটা স্থানভেদে যোগ্য কিনা?
তারপর ওই মেয়েগুলোর লজিক শুনুন, তাদেরটা স্থানভেদে যোগ্য কিনা যাচাই করুন।

এতে কি হবে?
এতে আপনি নিয়ম মেনে চলার "লুপ" এর ভিতর আঁটকাবেন না।
নিয়মের গুরুত্ব বুঝার মানসিকতা তৈরি হবে।
নতুন গ্রহণযোগ্য নিয়ম প্রদান করার ক্যাপাবিলিটি ক্রিয়েট হবে।

... ... ... ...

 Think different.
এতে আপনি নিজ মতামত বাদে অন্যদের মতামত শুনার এবং বুঝার মত মানসিকতা তৈরি করতে পারবেন।
মস্তিষ্কটাকে নিয়মফলো করার মেশিন বানাচ্ছেন কেনো?
একটু স্বাধীন চিন্তাভাবনা করতে দোষ নেই, তাতে আপনার চিন্তাশক্তি বাড়বে।

"অন্যের মত হবো" এই জিনিসটা যেমন ভুল,
"আমিই সঠিক" এই জিনিসটাও ভুল।
স্থানভেদে কোন মতটির গ্রহণযোগ্যতা কেমন সেটা জাজ করতে পারাটাই ভালো গুণ।

"অন্যের মতামত শুনেই তেড়ে মারতে যাওয়া" যেমন গোড়ামী,
"অন্যের মতামত শুনামাত্রই মেনে নেয়া" তেমন মূর্খতারূপ।

বুঝতে পারার এবং বুঝে নেয়ার মত ক্যাপাবিলিটি যখন উপরওয়ালা মস্তিষ্কে দিলেন, কেনো সেটার সঠিক ব্যবহার করবোনা?
সকল নিয়মের লজিক এবং এন্টিলজিক থাকবে, আমি মনে করি থাকাটাই তো ভালো।
কোনো জিনিসের ভালোটা জানবো, খারাপটা জানবোনা এ তো একপেশে জ্ঞান!

"কত লক্ষ্য জনম ভ্রমণ করে,
আমরা পেয়েছি ভাই মানব জনম।
এ জনম চলে গেলে, ও ক্ষ্যাপামন
আরতো পাবোনা না না
আর মিলবেনা..."

নিয়ম তো পশুও মেনে চলে, আপনার সাথে তাহলে তফাত কি রইলো?
পশুর মত জীবনযাপন না করে, গতানুগতিক লুপ থেকে বের হই,

...এবার আমরা একটু মানুষ হই।

"Loop"
(পর্ব - ০১)

তারিখ: ৮১০২/২০/২০.